চাল, ডাল, তেল ও চিনির পর এবার বেড়েছে আটা ও ময়দার দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে আটা ও ময়দার দাম কেজিতে বেড়েছে ৪-৫ টাকা। এতে ক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে কিনতে হওয়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে গম ও গমজাত পণ্যের দাম বেশি। তাই আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে।

রাজধানীর বাজারগুলোতে খোলা আটা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৩-৩৪ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ২৭-২৮ টাকায়। প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৬ টাকা।

আটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ময়দার দামও। বাজারে এক কেজি খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়। যেখানে আগের সপ্তাহে দাম ছিল ৩৭-৩৮ টাকা। আর প্যাকেটজাত ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। আগের সপ্তাহে ছিল ৪২-৪৪ টাকা।

মহাখালী কাঁচাবাজারে আটা কিনতে আসা রেদুয়ান মাশফি নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চালের দাম বাড়ায় এক বছর ধরে সকাল আর রাতে আটার রুটি খাচ্ছি। এখন আবার আটার দামও বেড়েছে।

আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মতো গরিবদের দেখার কেউ নেই। আয় কমছে আর জিনিসের দাম বাড়ছে, আমরা কী খেয়ে বাঁচব?

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মাসুম শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বস্তা আটা-ময়দার দাম বেড়েছে ৩০০-৩৫০ টাকা। সঙ্গে ভ্যান ভাড়া মিলে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা পড়ে যাচ্ছে। ফলে এখন কেজিপ্রতি ৪-৫ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

মধ্য বাড্ডার মা-বাবার দোয়া স্টোরের কুতুব সারওয়ার বলেন, তিন-চারদিন ধরে হঠাৎ করে আটা-ময়দার বাজার চড়া। দামাদামি করতে চাইলে মহাজনরা বলেন গমের দাম বাড়তি, তাই আটার দামও বাড়তি।

এদিকে দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে সরকারি বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবি। আজ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালিত বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতেও ২৮ টাকার খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৩ টাকায়। প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৮ টাকা কেজিতে। যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ৩৩-৩৫ টাকা। খোলা ময়দা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকায়। যা এর আগের সপ্তাহের একই সময়ে ছিল ৩৫-৩৮ টাকা। আর প্যাকেটজাত ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজিতে।

বড় ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে গত কয়েক মাস ধরে গমের আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে। আবার দেশের চাহিদার তুলনায় গম আমদানিও কমে গেছে। তাতে বাজারে গমের সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে ভালো মানের আটার বস্তায় (৫০ কেজি) ১৫০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে এক বস্তা ভালো মানের আটা ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুটা নিম্নমানের আটা বস্তা প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৮০ টাকায়। ভালো মানের ময়দা ৫০০ টাকা বেড়ে (৭৪ কেজির বস্তা) প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

নিতাইগঞ্জের আটা, ময়দা ও গম ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন মৃধা বলেন, দেশের মানুষ গম উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এদিকে করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেও গমের সরবরাহ কম। ফলে ব্যবসায়ীরাও কম গম আমদানি করেছেন। গম ও গমজাত পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে।

এমআই/এমএইচএস/জেএস