করদাতাদের সুবিধার্থে শিগগিরই আয়কর আইন বাংলায় প্রণয়ন করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসেই জনগণের মতামতের জন্য আইনটির খসড়া প্রকাশ করা হবে।

শনিবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে ডিজিট্যাক্স অ্যাপ উদ্বোধনকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (করনীতি) মো. আলমগীর হোসেন এ কথা জানান।

তিনি বলেন, শিগগিরই আয়কর আইন বাংলায় প্রণয়ন করা হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে আগামী মাসেই জনগণের মতামতের জন্য আইনটির খসড়া প্রকাশ করা হবে।
 
তিনি আরও বলেন, হার কমানো এবং প্রক্রিয়া সহজ না হলে করের আওতা বাড়বে না। কত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে করের হার কমানো হচ্ছে। কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে, যার ইতিবাচক ফল আমরা পেয়েছি। ইতোমধ্যে ৬১ লাখ ব্যক্তি ই-টিআইএন নিবন্ধন নিয়েছেন।

মানুষের মধ্যে কর দেওয়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছে জানিয়ে মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বিপুল সংখ্যক করদাতাকে প্রচলিত পদ্ধতিতে করসেবা দেওয়া সম্ভব নয়। করদাতাকে সেবা দিতে সব কিছু অনলাইনে করা ও রিটার্ন দাখিল স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে করার বিকল্প নেই। এনবিআর অনেক আগেই এ উদ্যোগ নিয়েছে। 

তিনি বলেন, আমরা অনলাইনের মাধ্যমে রিটার্ন ফরম পূরণ, দাখিল ও পেমেন্ট সিস্টেম চালু করছি। বেসরকারিভাবে ডিজিট্যাক্স এগিয়ে আসায় কর সেবাকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ আরও সহজ হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান খসরু, ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একে এম আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন, ডিজিট্যাক্সের পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার রঞ্জু ও ইআরএফ সেক্রেটারি এসএম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।

আয়কর রিটার্ন দাখিল আরও সহজ করতে দেশ ইউনিভার্সেল নামে একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে এসেছে ‘ডিজিট্যাক্স’ নামে এমন একটি ওয়েব অ্যাপ। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন ফরম এবং সম্পদের হিসাব-নিকাশ এখন অনলাইনে পূরণ করা যাবে। ঘরে বসেই করা যাবে আয়কর পরিশোধ এবং রিটার্ন ফাইল দাখিল। বাসায় বসেই নেওয়া যাবে আয়কর সংক্রান্ত যেকোনো সেবাও।

ডিজিট্যাক্সের মূল ফিচার বর্ণনা করে প্রতিষ্ঠানটির টিম মেম্বার সৈয়দা নুসরাত হায়দার বলেন, আমাদের সিস্টেমে রয়েছে আইন অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় আয়কর গণনা পদ্ধতি, যাতে ব্যবহারকারীরা সহজেই আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করতে পারেন। ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে, বাংলা ভাষায়ও সফটওয়ারটি ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। করদাতা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রিটার্ন পূরণ করে নিজে আয়কর অফিসে জমা দিতে পারেন অথবা তিনি যদি চান, তবে ডিজিট্যাক্সের পেশাদার আইনজীবীর মাধ্যমে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।

ডিজিট্যাক্সের সিস্টেমটি এনবিআরের সঙ্গে ইন্টিগ্রেট করতে পারলে ভবিষ্যতে তাদের মাধ্যমেই করদাতারা অনলাইনে তার রিটার্ন সাবমিট করতে পারবেন বলে জানান সৈয়দা নুসরাত হায়দার। এতে ম্যানুয়াল পেপার বেজ সাবমিশন প্রয়োজন হবে না এবং সরকারও ডাটা এন্ট্রি ছাড়াই রিয়েল টাইম আপডেট পাবে বলে জানান তিনি।

করদাতার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিষয়ে নুসরাত হায়দার বলেন, প্রত্যেক করদাতার ব্যক্তিগত আইডি ও পাসওয়ার্ড থাকবে। তিনি ছাড়া আর কেউ এ তথ্য দেখতে পাবেন না। করদাতা তার তথ্য সেভ করে রাখতে পারবেন। চাইলে যেকোনো সময় আবার লগইন করে এডিট করতে পারবেন।

তিনি বলেন, সরকার একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে আয়করের আওতায় আনার জন্য এরইমধ্যে অনেক ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগের সঙ্গে ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা কাজ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর অংশ হিসেবে আমরা সফটওয়্যারটি ডেভেলপ করেছি। ভবিষ্যতে সরকারের সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড হয়ে কাজ করতে পারা  আমাদের লক্ষ।

আয়কর আইনজীবিরাও ডিজিট্যাক্সের মাধ্যমে তাদের ক্লায়েন্টদের কর সেবা দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সৈয়দা নুসরাত হায়দার।

আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান খসরু বলেন, আয়কর আইন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম একটি আইন। এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। এ আইন নিয়ে এতো বড় ‍উদ্যোগ নেওয়ায় ডিজিট্যাক্স প্রশংসার দাবি রাখে। ডিজিট্যাক্সের উদ্যোগটি করদাতাদের সহায়তা করবে। এর ফলে বিপুল মানুষকে রিটার্ন দাখিলে আগ্রহী করা যাবে। সরকারও রাজস্ব পাবে।

এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে ডিজিট্যাক্সের অ্যাডভাইজার ও দেশ ইউনিভার্সেলের নির্বাহী পরিচালক মোসারাত নাইমা বলেন, ডিজিট্যাক্স একটি স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন ফরম পূরণের ওয়েব অ্যাপলিকেশন। রেজিট্রেশন করার পর করদাতা তার আয়ের তথ্য দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর গণনা হয়ে যাবে।

এসআই/আরএইচ