সাধারণ জনগণের কাছে সহজবোধ্য করার লক্ষ্য নিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে বাংলা ভাষায় আয়কর আইন-২০২২। আইনের খসড়া করদাতা ও বিভিন্ন অংশীজনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তা এখন সকলের মতামতের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে।

পুরো আইনটিকে ২৮টি অংশ এবং ৬টি তফসিলে বিন্যস্ত করা হয়েছে। সকলের মতামত শেষে আইনটি ব্যবহারের জন্য পাস হলে করদাতাদের হয়রানি অনেকাংশে কমে যাবে। দূর করবে অনেক অস্পষ্টতা। এনবিআরে সংশ্লিষ্টরা এমনটাই মনে করেন।

তাদের মতে ১৪টি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে পুরো আইনটিতে, যা করদাতাদের প্রত্যাশা কিংবা দাবি অনেকটা পূরণ করবে। খসড়া আইনের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-

১. খসড়া আইনটি সহজবোধ্য বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করা হয়েছে। এই আইনের আন্তর্জাতিক প্রয়োগ ও বিদেশি বিনিয়োগবান্ধবতা নিশ্চিতে একই সাথে ইংরেজি পাঠ প্রণয়নেরও বিধান রাখা হয়েছে।

২.ভাষা কাঠামোয় যথাসম্ভব ক্ষুদ্র বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে করদাতারা সহজেই এই আইনের বিধান বুঝতে পারবেন।

৩. বিদ্যমান অধ্যাদেশে একই বিষয়ে প্রযোজ্য বিভিন্ন বিধানের বিন্যাস সুবিন্যস্ত নয়। খসড়া আইনে একই বিষয়ের সকল বিধানাবলির বিন্যাস সুবিন্যস্ত ও একই জায়গায় রাখা হয়েছে। এতে আইনের বিধানাবলি পরিপালন অনেক সহজ হবে।

৪. পুরো আইনটিকে ২৮টি অংশ এবং ৬টি তফসিলে বিন্যস্ত করা হয়েছে। করদাতাদের কোনো একটি খাতের আয় নিরূপণে সুনির্দিষ্ট একটি অধ্যায় বা বিভাগে সকল বিধানাবলির সন্নিবেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, পুরো আইনের বিভিন্ন জায়গায় করদাতাদের ভ্রমণের প্রয়োজন হবে না।

৫. বিদ্যমান আইনে অডিট নির্বাচন এবং অডিট কার্যক্রম পরিচালনায় সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপদ্ধতি নেই। প্রস্তাবিত খসড়া আইনে অডিট নির্বাচন ও অডিট কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্ত একটি সুনির্দিষ্ট এবং অবশ্য পরিপালনীয় নির্দেশিকা প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে অডিট সংক্রান্ত স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

৬. প্রস্তাবিত আইনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্ববিবেচনা প্রসূত ক্ষমতা (Discretionary Power) যথাসম্ভব কমানো হয়েছে।

৭. আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে করদাতার জন্য ই-কর ব্যবস্থাপনার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে সময়, খরচ এবং অফিস আগমন হ্রাস পাবে।   

৮. আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার অংশ হিসেবে আর্নিংস্‌ স্ট্রাইপিং নিয়ম (Earnings Striping Rule) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে করে অনিবাসী কোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বরাবরে সুদ হিসেবে অর্থ প্রেরণ একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে করতে হবে। 

৯. আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার অংশ হিসেবে খসড়া আইনে অভ্যন্তরীণ ট্রান্সফার প্রাইসিং ও কর এড়ানো প্রতিরোধের বিধানাবলি সন্নিবেশ করা হয়েছে।

১০. উৎসে কর কর্তন এবং সংগ্রহের নিয়মাবলি অধিকতর সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে করে উৎসে কর কর্তন এবং সংগ্রহে আর কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না।

১১. পূর্বে যেসব অনুমিত আয় এসআরও-এর মাধ্যমে নিরুপিত হতো তা এখন মূল আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে এ সকল খাতের আয়ের হিসাব করতে আর কোনো প্রকার অস্পষ্টতা থাকবে না।

১২. বিদ্যমান আইনে লোকসান সমন্বয় এবং জের টানার বিধানাবলি অত্যন্ত সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৩. ব্যাংক হিসেবে স্বয়ংক্রিয় কর প্রত্যর্পণের বিধান করা হয়েছে। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি অতিরিক্ত কর পরিশোধ তার রিফান্ড ব্যাংকহিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঠানোর বিধান করা হয়েছে।

১৪. ব্যবসায়িক খরচ অনুমোদনের আইনের বিধানসমূহ আরো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এছাড়া প্রাক-প্রারম্ভিক ব্যয় অনুমোদনে নতুন করে অ্যামর্টাইজেশনের হার সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম আইনটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গণমাধ্যমে বলেছেন, একশ বছরের পুরোনো আয়কর অধ্যাদেশটিকে যুগোপযোগী ও সহজীকরণ করে আইনে রূপান্তরের জন্য খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। আগের আইনে কোনও একটা বিষয় বুঝতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করা লাগত। এখন আইনটির একই বিষয়ের সকল বিধানাবলী একই জায়গায় সন্নিবেশ করা হয়েছে। এতে করে আইনটির বিধানাবলী পরিপালন অনেক সহজ হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, খসড়া আইনটি গত ২৫ অক্টোবর ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। আগামী ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত আইন বিষয়ে পরামর্শ ও মতামত দিতে পারবে যেকেউ। খসড়াটি চূড়ান্তভাবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের আগে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ওয়ার্কশপ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও সভা করবে এনবিআর। মতামত ও পরামর্শ পর্যালোচনা শেষে আগামী ৩০ নভেম্বর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খসড়া আইনটি উপস্থাপন করা হবে।

আরএম/এইচকে