দুবাই এখন উৎসবের নগরী। করোনাভাইরাস থেকে কিছুটা মুক্তি মিলতেই সরগরম মরুর এ শহর। একদিকে চলছে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অন্যদিকে দুবাই এক্সপো ২০২০। এমনিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি সবসময় পর্যটকদের পদচারণায় থাকে মুখর। এখন দুই উৎসবে পোয়াবারো ট্যাক্সিচালকদের। এক্সপো কিংবা দুবাই-শারজার মাঠমুখী ব্যস্ততাই তাদের বেশি। 

তবে এক্সপো ২০২০ নিয়ে যেন মাতামাতিটা বেশি। এজন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের দূরদর্শী ভাবনাটাও প্রশংসা পাওয়ার মতো। দেশটির নানা প্রান্ত থেকে আপনি এক্সপো আসতে চাইলে পকেট থেকে কোনো অর্থই খরচ হবে না। চলে আসতে পারবেন ফ্রি বাসে। যদিও পর্যাপ্ত সময় নিয়ে আসতে হবে এ গণপরিবহনে।

এবারের দুবাই এক্সপোতে আছে বাংলাদেশও। এ আয়োজনের ৬০ নম্বর স্টলটি লাল-সবুজের। যেটির সামনে গেলে চোখ পড়বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। পাশেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি। স্টলের ভেতরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই এক্সপো ২০২০-তে শনিবার ছিল বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের যেন মিলন মেলা। বিনিয়োগ আকর্ষণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের আয়োজনে এদিন এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনে ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ মিশন এবং দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব আব্দুল আজিম চৌধুরী এবং সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ মিশনের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর। এছাড়া ছিলেন দুবাইয়ে বাংলাদেশের কনস্যুলার জেনারেল বি এম জামাল হোসেন।

সেমিনারে দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিবৃন্দ এবং ভারত, চীন, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা অংশ নেন। সেমিনারের মূল প্রেজেন্টেশনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ড সবার সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করা হয়। 

সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেজার নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব আব্দুল আজিম চৌধুরী বলেন, ভূমি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বেজা বাংলাদেশে শিল্পায়নের গতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে চলেছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি সব সংস্থার আন্তরিক সহযোগিতায় বেজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের জন্য সুমিতোমো কর্পোরেশনের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তিসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে বেজার ভূমিকা মাইলফলক বলে উল্লে­খ করেন। 

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিকল্পিত ও ডাইনামিক অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে অর্থনীতির মূল ধারায় সম্পৃক্তকরণে বেজা ভূমিকা রাখছে। দুবাই থেকে বেজার মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগের একটি ধারা অচিরেই স্থাপন করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশ মিশনের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর দুবাই এক্সপোতে বিনিয়োগ আকর্ষণে এ সেমিনার আয়োজনের জন্য বেজাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ সেমিনারের ফলে দুবাই থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত হলো, যা এগিয়ে নিতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। 

সেমিনারে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেজার কার্যক্রম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালার প্রতি আস্থা প্রকাশ করে সরকারকে দক্ষ শ্রম ব্যবস্থাপনা, দ্রুত সেবা প্রদান, স্বর্ণবিষয়ক নীতিমালা আধুনিকায়নেরও আহ্বান জানানো হয়।  

সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সমাবেশ এক্সপো ২০২০ দুবাইয়ে শুরু হয়েছে গত ১ অক্টোবর। পাঁচ বছর অন্তর আয়োজিত হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক এ ইভেন্ট। এবার আয়োজক মধ্যপ্রাচ্যের জমকালো শহর দুবাই। ১৯১টি দেশ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এখানে তাদের দেশ ও ঐতিহ্য তুলে ধরছেন। আল-মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে দুবাই দক্ষিণ জেলার ৪.৩৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে বিশাল এ এক্সপো চত্বর। যেখানে ‘সুযোগ’, ‘গতিশীলতা’ ও ‘স্থায়িত্ব’- তিনটি থিমভিত্তিক অঞ্চল ভাগ করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ আছে স্থায়িত্ব অঞ্চলে।

সেখানে ডিজিটালি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে প্রতিটি দেশের জীবন-যাত্রার গল্প।

এটি/এনইউ