গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে যুক্তরাজ্যে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত খরচ বাড়ার এ হার ৪.২ শতাংশ। 

মূলত বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্যের জন্য এ অবস্থায় পড়েছে যুক্তরাজ্য। ব্যবহৃত গাড়ি এবং খাবারের খরচও বেড়েছে দেশটিতে। 

কোভিডের কারণে আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করার পর থেকে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। 

দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতি ঠেকাতে সুদের হার বাড়াতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। 
মূল্যস্ফীতি হলো কোনো দ্রব্যের দাম বাড়ার হার। অর্থাৎ কোনো পণ্য কিনতে যদি আগে ১০০ টাকা লাগতো, আর এখন ১০৫ টাকা লাগে। তবে ওই দ্রব্যের মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশ বুঝতে হবে। 

মূল্যস্ফীতির পার্থক্য হয়তো প্রতি মাসে বোঝা যায় না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর একটা বড় প্রভাব থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এর ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে; যেটাকে জীবনযাত্রার ব্যয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

যুক্তরাজ্যে গৃহস্থালী গ্যাস ও বিদ্যুতে মূল্যসীমা গত মাসে উঠে যাওয়ার পর মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধিতে এর বড় ভূমিকা ছিল। এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত গ্যাস বিল বেড়েছে ২৮.১ শতাংশ, আর বিদ্যুত বিল বেড়েছে ১৮.৮ শতাংশ।  

বিশ্ববাজারের পেট্রোলের দাম বৃদ্ধির আঁচও লেগেছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের পর দেশটিতে এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল। 

বিশ্বব্যাপী মাইক্রোচিপ সংকটের কারণে দেশটিতে এ বছরের এপ্রিলের পর থেকে ব্যবহৃত গাড়ির দাম বেড়েছে ২৭.৪ শতাংশ। 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ কী? 
তেল এবং গ্যাসের চাহিদা বাড়তে থাকায় বিশ্বব্যাপী এসবের দাম বাড়ছে। এর ফলে গৃহস্থালী ও বাণিজ্যিক খরচ বাড়ছে। ব্যবসায় খরচ বাড়লে এর ভার ভোক্তার ওপর এসে পড়ে। 
ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী, কম্পিউটার চিপসহ বিভিন্ন পণ্যের সংকট চাহিদা-যোগানের ভারসাম্য নষ্ট করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে।  

মহামারি চলাকালে বিভিন্ন ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল তার অনেকগুলো এখন প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

মহামারি এবং ব্রেক্সিটের কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্মী নিয়োগেও একটা জটিলতা আছে বলে দেখা যাচ্ছে।  

এ মাসের শুরুর দিকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন মূল্যস্ফীতির হার সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠতে পারে, তারপর হয়তো এটা আবার কমতে শুরু করবে। 

চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক বলছেন, কোভিডের ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পর অনেক দেশই এখন উচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখে পড়েছে। মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে রয়েছে,  আমরা সেটা জানি। 

তবে ছায়া চ্যান্সেলর রাশেল রিভিস বলছেন, কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সরকার কেবল বৈশ্বিক সমস্যাগুলোকে দুষছে। 

যুক্তরাজ্যের মতো এই একই সমস্যার মুখোমুখি আরও কয়েকটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের খুচরা মূল্য বেড়েছে ৬.২ শতাংশ, তিন দশকের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। অক্টোবরে ইউরোজোনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪.১ শতাংশ; ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর যা সর্বোচ্চ। সেপ্টেম্বরে কানাডার মূল্যস্ফীতি ছিল ১৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

সূত্র : বিবিসি।  

এনএফ