সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীতে চালের দাম কেজি প্রতি দুই টাকা বেড়েছে। চালের পাশাপাশি তেল, ডাল, আটা-ময়দার দামও বেড়েছে। তবে এর মধ্যে একটু স্বস্তির খবর হচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন,আলু-সিম ও কাঁচামরিচের দাম কমেছে।

মেরুল বাড্ডার ব্যবসায়ী রজিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন বাজারে নতুন ধান এসেছে। চালের দাম তো কমার কথা, কিন্তু বস্তা প্রতি ৫০-৭০ টাকা বেড়েছে। শুনছি আরও বাড়বে।

সেগুনবাগিচা বাজারে চাল কিনতে আসা রেদওয়ান আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চালের দাম বাড়ছে। সরকারে উচিৎ এই ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহজানপুর, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, বাদামতলী, সূত্রাপুর এবং শ্যামবাজারে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৫৮-৬৮ টাকা কেজিতে। সেই চাল আজ বৃহস্পতিবার বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা কেজিতে। অর্থাৎ কেজি প্রতি এসব চালের দাম দুই টাকা বেড়েছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, চলতি বছরের শুরু অর্থাৎ পহেলা জানুয়ারি বাজারে স্বর্ণা বা মোটা চাল বিক্রি হয়েছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। পাইজম চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৬ টাকায়। আর ৫৮-৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে নাজিরশাইল ও মিনিকেট চাল।

মোট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজিতে, মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ কেজিতে। আর ভালো মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭৫ টাকা কেজিতে। 

চালের এই দাম বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীরা দুষছেন মিলারদের। তারা বলছেন, হঠাৎ করে মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েছেন। তাদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি। মিলারদের অজুহাত, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দামও বেড়েছে।

বাংলাদেশ চালকল মালিক গ্রুপের সহ-সভাপতি শহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, চাহিদার তুলনায় বাজারে এখন ধান কম, তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে আমাদের। উৎপাদন খরচ, আনুষঙ্গিক ব্যয় ও ব্যাংক হিসাব, সব মিলে মালিকরা লোকসানে রয়েছেন। কিন্তু মিল না চালালে লোকসান আরও বাড়বে। তাই তারা লোকসান কমাতে বাধ্য হয়ে মিল চালাচ্ছেন।  

চালের পাশাপাশি বাজারগুলোতে প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা। টিসিবির হিসেবে, প্যাকেটজাত আটা ১ জানুয়ারি বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে। আজ সেই আটা বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৮ টাকা কেজিতে। বাস্তবে খুচরা মূল্য আর বেশি।

ডালের মধ্যে বড় দানার মুসর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকা কেজিতে; যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৮৮-৯০ টাকা কেজি। একইভাবে মাঝারি দানার মুসর ডাল কেজি প্রতি ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকায় আর ছোট দানার ডাল ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা কেজিতে।

এদিকে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা কেজিতে। মাঝারিমানের নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে। আর আমদানি করা মিয়ানমার ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নিম্নমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে। 

দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৭০ টাকা কেজিতে। আর বিদেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়; যা এর আগের সপ্তাহে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

গত সপ্তাহে ৩০-৪০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজিতে। ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটোর দাম অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে কেজি ২০-২৫ টাকা। সিম বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজিতে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে।

ভরা মৌসুমে ছোট সাইজের ফুলকপি প্রতি পিস ৩০ টাকা, একটু বড় ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। মূলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। লাউশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। পালন-পুঁইশাক এবং ডাটাশাক বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়।

এছাড়া ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। আর ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৭-৪০ টাকা হালিতে।

এমআই/এনএফ