আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা প্রথমবারের মতো ঢাকার বাইরে পূর্বাচলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আর দূরত্বের কারণে মেলায় জনসমাগম অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম। মেলা শুরুর ১০ দিন পরও সব স্টল তৈরির কাজ শেষ হয়নি। কোথাও এখনো স্টল তৈরির কাজ হচ্ছে আবার কোথাও স্টলে পণ্য সাজানোর কাজ চলছে।

মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে কুড়িল উড়াল সেতুর নিচ থেকে পূর্বাচলের দিকে চলতে চলতে দেখা গেছে, পথের আগের সব চিহ্ন বদলে গেছে। লেন বাড়ানো হয়েছে। কোথাও অবকাঠামো তোলা হচ্ছে বিচিত্রভাবে। ধুলাবালির শেষ নেই। কুড়িল থেকে বিআরটিসির ৩২টি বাস চলাচল করছে বাণিজ্য মেলার যাত্রী পরিবহনে। ব্যক্তিগত গাড়িতেও ছুটছেন অনেক দর্শানার্থী। তবে ধুলাবালি আর পথের নানা সমস্যায় মেলায় দর্শনার্থীর উপস্থিতি অনেক কম। সব মিলিয়ে জৌলুস হারাচ্ছে বাণিজ্য মেলা।

সরেজমিনে দেখা গেল, কুড়িল থেকে পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলায় ঢুকতে এত ভিড় নেই। মেলায় ঘুরে ঘুরে জোশ কোম্পানির ব্লেজারের স্টলে গিয়ে দেখা গেল, হাতে গোনা কয়েকজন ক্রেতা দরদাম করছেন। মেলা ১ জানুয়ারি শুরু হলেও এই স্টল তৈরি হয়েছে গতকাল, ১০ জানুয়ারি।

স্টলের বিক্রয়কর্মী মো. অনিক বললেন, চলাচলের বিধিনিষেধ জারির দিনে আমরা স্টলে পণ্য তুলেছি। এখানে দুই হাজার টাকা থেকে তিন হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ব্লেজার পাওয়া যাচ্ছে।

রাজধানীর ফার্মগেট থেকে আসা মো. জুয়েল জানালেন, কুড়িল থেকে বিআরটিসির বাসে ৩০ টাকা, এরপর অটোরিকশায় ১০ টাকা ভাড়া লেগেছে মেলায় আসতে। আবার ঢুকতেও হয়েছে টিকিট কেটে। ঢাকা থেকে আসা যাওয়ার খরচ তুলনামূলক বেশি হয়ে যাচ্ছে।

মেলায় জুয়েলারি সামগ্রী নিয়ে স্টলে বসেছিলেন শারমীন সুলতানা। সাংবাদিক পরিচয় জেনে বললেন, ‘ফুটপাতে বসলেও বিক্রি হতো, এখানে কে আসবে?’ ক্রেতা নেই বলে তিনি আক্ষেপ করেন।

খাবারের দোকান-স্টলের সামনে ক্রেতারা ছিলেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের সামনে, মৈত্রী প্লাস্টিক সামগ্রী কিংবা মুক্তা ওয়াটার ড্রিংকসের স্টলে ভিড় দেখা গেছে। পাটের তৈরি জিনিসপত্র কেনার দিকে ঝোঁক দেখা গেছে কিছু ক্রেতার।

জার মার্টসের স্টলে পাটের তৈরি ব্যাগ বিক্রি হচ্ছিল ভালোই। বিক্রয়কর্মী মো. নুরুজ্জামান বলেন, ক্রেতা আরও বাড়বে। এ স্টলে জুট ফ্লোর ম্যাট দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জুট রানারের দাম এক থেকে দেড় হাজার টাকা। জুট টেবিল ম্যাটের দাম সাড়ে ৩০০ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় স্টল সংখ্যা কমানো হয়েছে। দর্শনার্থীদের মাস্ক পরতে হবে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

মেলায় টিকিট চেকিংয়ের সময় মাস্ক ছাড়া ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না দায়িত্বরত কর্মীরা। কিন্তু মেলায় ঢুকেই বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক খুলে ফেলছেন।

দর্শনার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন কি না তার তদারকিও চলছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর অফিস আদেশের মাধ্যমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তদারকির জন্য। তারপরও পুরোপুরি মানা হচ্ছে না বিধিনিষেধ।

এদিকে গতকাল (সোমবার) করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা চলবে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি এ বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়নি। কমিটি যখন মেলা বন্ধের নির্দেশনা দেবে, তখন বন্ধ এটি বন্ধ করা হবে।

উল্লেখ্য, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসরের পর্দা উঠেছে নতুন বছরের প্রথম দিন। পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এবারই প্রথম স্থায়ী কমপ্লেক্সে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলছে। প্রবেশ মূল্য বড়দের জন্য ৪০ টাকা এবং ছোটদের জন্য ২০ টাকা।

পিএসডি/ওএফ/জেএস