দেশের সব ধরনের ব্যবসায়ীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতি, অদক্ষ প্রশাসন ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা। এই সমস্যা বড় ব্যবসায়ীদের তুলনায় ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য আরও বেশি। পাশাপাশি করোনার পরে যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হচ্ছে সেটাও বৈষম্যমূলক।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক মতামত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জরিপের ফল প্রকাশ করে সিপিডি। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ তথ্য উপস্থাপন করেন।

‘বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২১ উদ্যোক্তা মতামত জরিপ’ শীর্ষক এ গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।

জরিপে বলা হয়, ব্যবসা করতে গিয়ে দুর্নীতিকেই প্রধান বাধা হিসেবে দেখছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। ১৬টি সমস্যার মধ্যে দুর্নীতিকে তারা রেখেছেন এক নম্বরে। দ্বিতীয় সমস্যা হিসেবে অদক্ষ প্রশাসনের কথা বলেছেন তারা। তৃতীয় হলো অর্থায়নের সীমিত সুযোগ।

দেশের ৭৩টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ওপর চালানো হয়েছে এ জরিপ। যার মধ্যে উদ্যোক্তা ও বোর্ডের সদস্যরা রয়েছে। যাদের মূলধন ১০ কোটি টাকার ওপর শুধু সেই ব্যবসায়ীরাই এতে অংশ নিয়েছেন। জরিপের সময়কাল ছিল গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ফরিদপুর এলাকায় অবস্থিত কৃষি, সেবা ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপ পরিচালনা করা হয়।

ফলাফলে আরও দেখা গেছে, ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ীই প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বলেছেন নানা ধরনের দুর্নীতির কথা। লাইসেন্স, কর এবং বিভিন্ন পরিষেবার জন্য আর্থিক লেনদেনে যেতে হয় তাদের। ৬৭ শতাংশ ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার পথে অদক্ষ আমলাতন্ত্রকে দায়ী করেছেন। টাকা পাওয়ার সুযোগ সীমিত থাকার কথা বলেছেন ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী। এর পর আছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ঘন ঘন নীতি বদল ইত্যাদি। জরিপে ২৮ শতাংশ ব্যবসায়ী বলেছেন, করোনার প্রভাবে তাদের খরচ কমাতে হচ্ছে। খরচ কমাতে গিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে বড় ব্যবসায়ীরা যত বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন তার চেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। ৫২ শতাংশ বড় ব্যবসায়ী জানিয়েছেন দুর্নীতি তাদের কাছে ব্যবসার প্রধান প্রতিবন্ধকতা। আর ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ১০০ ভাগ জানিয়েছে দুর্নীতি তাদের জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা। অর্থাৎ এ থেকে বোঝা যায়- দেশে নীতি সুবিধা বাস্তবায়নে বৈষম্য রয়েছে। ফলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় টিকে থাকার চ্যালেঞ্জও বেশি।’

আর ৪৫ শতাংশ ব্যবসায়ী অবকাঠামো দুর্বলতাকে ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সিপিডি বলছে, এক সময় অবকাঠামো দুর্বলতা এক নম্বর সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করতেন। এখন এটি নেমে ৪ নম্বরে এসেছে। এর অর্থ দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে।

সামনের ১০ বছরে দেশে নতুন কী কী ব্যবসা উঠে আসবে তারও একটি ধারণা পাওয়া গেছে জরিপে। দেখা গেছে, ৬৭ শতাংশ বলেছেন, ডিজিটাল আর্থিক সেবা আরও বিকশিত হবে। দক্ষ মানবসম্পদ খাতকে দ্বিতীয় অবস্থানে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। তৃতীয় অবস্থানে আছে ডেটা ম্যানেজমেন্ট।

২০২০ সালেও ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে জরিপ করেছিল সিপিডি। তখন ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে উঠে এসেছিল অদক্ষ প্রশাসন। ওই সময় ব্যবসায়ীরা দুর্নীতিকে দ্বিতীয় ও অর্থায়নের সীমাবদ্ধতাকে রেখেছিলেন তৃতীয় অবস্থানে।

মূলত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের গ্লোবাল কমপিটিটিভ রিপোর্টেও বা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদনের জন্য এ জরিপ করা হয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এ বছর তাদের প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা বা কোনো র‌্যাংকিং ছাড়াই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করলো সিপিডি। ২০২১ সালে এপ্রিল থেকে জুলাই সময়ে এ জরিপটি করা হয়। এতে প্রধানত অবকাঠামো, প্রতিষ্ঠান, নিরাপত্তা, আর্থিক বিনিয়োগ, মানব সম্পদ, কাজের পরিবেশ, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও ঝুঁকি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়।

আরএম/এসকেডি