আমাদের দেশের মানুষজন অনেক বেশি সৃজনশীল আইডিয়া নিয়ে আসছে এবং তারা বিদেশে বিনিয়োগ করার চেষ্টা করছে। বিদেশে বিনিয়োগ করা অন্যায় কিছু না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

রোববার (৩০ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টায় অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষজন অনেক বেশি সৃজনশীল আইডিয়া নিয়ে আসছে এবং তারা বিদেশে ইনভেস্ট করার চেষ্টা করছে। বিদেশে ইনভেস্ট অন্যায় কিছু না। যদি অ্যালাউ না করেন তাহলে এ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাবে। তার চেয়ে যদি আমরা অফিসিয়ালি অ্যালাউ করি, সেখানে আমরা নিয়ম করে দিয়েছি সবাইকে অ্যালাউ করা হয়নি। অ্যালাউ করা হয়েছে যারা এক্সপোর্ট করে, নিজের অ্যাকাউন্টে এক্সপোর্টের বিপরীতে রিটেনশন মানি থাকে সেখান থেকে তাদের এক্সপোর্টের ২০ শতাংশ তারা বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে। সেই ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয়েছে গ্রস এসেস থেকে লায়াবিলিটি বাদ দিলে যে নেট এসেস সেখান থেকে ২০ শতাংশ ২৫ শতাংশের মধ্যে যেটা কম সেই পরিমাণ টাকা তারা বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে।’

চলতি বছর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ২৫ শতাংশ কমে গেছে। এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইনভেস্টমেন্ট অন্য জিনিস। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আমাদের অন্যান্যরাও আছে। প্রত্যেক দেশেই তাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ রেটটা তারা আস্তে আস্তে অ্যালাউ করে, জনগণের বিদেশি বিনিয়োগের জন্য, আমরাও সেই পথে যাচ্ছি। আমরা মনে করি আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ হলে সেখান থেকে ইনকামও আসবে। আমাদের জনগণই সেখানে গিয়ে চাকরি করবে। আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আমরা যদি বন্ধ করে রাখি, অন্যদের অ্যালাউ না করি তাহলে আমরা পিছিয়ে থাকব। আমি মনে করি এটা আমাদের ভালো উদ্যোগ। এটা নিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছি। বিষয়টি হলো আমাদের দেশে লোকজনের কমপেটেটিভনেস অনেক বেশি, আমাদের সক্ষমতাও অনেক বেশি।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ আমাদের উঠানামা করবে, যখন আমরা ইম্পোর্ট বেশি করি তখন সেটি রিজার্ভ থেকেই ব্যয় করতে হয়। রিজার্ভ কীভাবে হয়, যখন আমরা এক্সপোর্ট করি তখন সেই এক্সপোর্টের ফলে আর্নিং মানিটা চলে যায় বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে। তাদের নির্দিষ্ট লিমিট থাকে, এর বেশি তারা ফরেন এক্সচেঞ্জ রাখতে পারে না। তখন তাদের বিক্রি করতে হয়, বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা কিনে নেয় মার্কেট প্রাইজে। সেভাবেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ বাড়ে। যেমনিভাবে এক্সপোর্ট তেমনিভাবে রেমিট্যান্স। কারণ রেমিট্যান্স যখন বেশি আসে তখন সেটি চলে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কাছে। ব্যাংকগুলো তা বিক্রির জন্য দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এগুলো কিনে নিয়ে তাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ বৃদ্ধি করে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন হিউজলি ইম্পোর্ট বিল পেমেন্ট করতে হচ্ছে। এতে করে কিছুটা উঠানামা করে, আমরা পেমেন্ট করলে কিছুটা কমে। এখন যে ৪৫ থেকে ৪৬ বিলিয়ন ডলারে উঠানামা করছে এটা ঠিক আছে। আমরা যদি পেমেন্ট না করতাম তাহলে বহু আগেই আমাদের ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে। আমি মনে করি আমাদের হবে, আমরা এভাবে করতে করতে এগুব।’

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির উন্নতি হলে জিডিপি বাড়বে। জিডিপিতে শুধুমাত্র দেশের উন্নয়ন থাকে না, আপনি যে বাজারে জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন সেগুলোও জিডিপিতে যায়, সুতরাং কেবলমাত্র রাস্তাঘাট জিডিপিতে আসে না। জিডিপিতে জনগণের আয়-ব্যয় সবকিছুই আসে। শুধুমাত্র রেমিট্যান্স থেকে যে আয়টি করি সেই আয়টি আমাদের জিডিপিতে যায় না, কিন্তু আমাদের মাথাপিছু আয়ে আসে। আমাদের রেমিট্যান্সও বাড়তি, রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক আছে। সেখানেও প্রবৃদ্ধি আছে। জিডিপিতেও প্রবৃদ্ধি আছে। মানুষ বাদ যাবে কীভাবে? আমরা যদি সামষ্টিকভাবে আমাদের সব জিনিস একসঙ্গে দেখার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা বুঝব আমাদের দেশের ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে ব্যবধান যেটা ছিল, সেটি থাকারও কোনো কারণ নাই। সেই ব্যবধান নিরসনের জন্য সরকারের যেসব করণীয় সেগুলো সরকার অবশ্যই বাস্তবায়ন করে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ইনকাম ইকুইটি ঠিক রাখতে সরকারের কাছে কিছু বিষয় থাকে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে আমাদের ট্যাক্সেশন সিস্টেম। যে যত বেশি আয় করবে তার ট্যাক্স হবে তত বেশি। যারা ট্যাক্স দেন না তাদের জন্য সোশ্যাল সেফটিনেট আছে। সেখানেও তারা বেনিফিটেড হচ্ছে। আমি মনে করি এভাবেই সারা বিশ্বের অর্থনীতি চলে, আমাদেরও সেভাবেই চলছে। আমরা মনে করি আমরা যেভাবে এগুচ্ছি তাতে জাতির পিতা যে স্বপ্ন ছিল উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম ভেদাভেদ থাকবে না, শহর এবং গ্রামের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। আমাদের স্বপ্ন ২০৩০ সালের মধ্যে এগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চয়ই হবে।’

এসআর/এসএসএইচ