দেশের আইনে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত নারী শ্রমিকদের কাজ করতে পারার কথা বলা থাকলেও, ৪০ এর পর অনেককে কারখানা ছেড়ে চলে যেতে হয়। গ্রিন ফ্যাক্টরি, প্লাটিনাম ও গোল্ড ফ্যাক্টরির কথা বলা হলেও আমাদের মূল কাঠামোই ঠিক নেই। অনেক গ্রিন ফ্যাক্টরি ঠিকমত বেতনও দেয় না বলে অভিযোগ করেছেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার।

রোববার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক ডায়ালগে অংশ নিয়ে তিনি এমন অভিযোগ করেন।

বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতে সবুজ সুরক্ষা শীর্ষক ডায়ালগে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। এছাড়া বিজিএমইএ সভাপতি মো. ফারুক হোসেন ও বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমসহ বিভিন্ন সংগঠনের বক্তারা বক্তব্য রাখেন।

নাজমা আক্তার বলেন, কাজ করতে গেলে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শুধু অবকাঠামো উন্নত হলে হবে না, এখানে নারী শ্রমিকদের অধিকার ও তাদের সুরক্ষা বড় প্রশ্ন। কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন কোনো আইন কিন্তু নেই। এটা করতে হবে। আইএলও কনভেনশনের ১৯০ আর্টিকেলকে বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের নারী শ্রমিকেরা ৪০ বছর বয়সের পর ফ্যাক্টরিতে থাকতে পারেন না। ফ্যাক্টরি ছেড়ে তারা কোথায় যায়, কী করছে সেটার কিন্তু খোঁজ রাখছি না। বাংলাদেশ জনবহুল দেশ হিসাবে শ্রমশক্তি বড় সম্পদ। দেশের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত কাজ করতে পারবে, সেখানে ৪০ এর পরে নারী শ্রমিক ঝরে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, মালিকরা প্রতিনিয়ত আইন ভঙ্গ করে যাচ্ছেন। মেয়েদের কম মজুরি দিয়ে অনেক ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা গ্রিন ফ্যাক্টরি, প্লাটিনাম ও গোল্ডের কথা বলি। কিন্তু আমাদের মূল কাঠামোই ঠিক নেই। অনেক গ্রিন ফ্যাক্টরি ঠিকমত বেতনও দেয় না। হয়ত ফ্যাক্টরির ইট-পাথর সুন্দর। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত ভেতরের সিস্টেমগুলো সুন্দর না হবে, ততক্ষণে কিন্তু সামনে এগোবে না। একপেশে কিন্তু হবে না। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কীভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টা থাকতে হবে। কীভাবে শ্রমিকদের রক্ষা করা যায়, সেই জায়গায় মালিক ও ব্রান্ডের কর্তাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

কেমিক্যাল ব্যবহারে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে উল্লেখ করে নাজমা বলেন, নিট ফ্যাক্টরিতে বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালো বলছি। কিন্তু কেন পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এই ফ্যাক্টরি চায় না। কারণ এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। নিট ফ্যাক্টরিতে সবচেয়ে বেশি কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। আমরা কতটুকু গ্রিন ফ্যাক্টরির নিয়ম মানছি? আজকে ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জসহ আশেপাশে গেলে দেখবেন প্রতিনিয়ত লাল, সবুজ ও নীল রংয়ের পানি নদী-নালায় মিশে যাচ্ছে। সেখান থেকে পরিবেশ ও মানুষের মারাত্মক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছি। আমাদের মৎস্যসম্পদ পুরোপুরি ক্ষতির মুখোমুখি। একদিকে আমাদের ব্যবসা হচ্ছে, অন্যদিকে আমাদের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এটা কতটুকু দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমাদের শ্রমিকরা খুশি কি না। তাদের স্বাস্থ্য, থাকার পরিবেশ, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা দেখা হচ্ছে কি না। সবার আগে মানুষ। আমরা স্বীকৃতি চাই, কারো দান ও দয়ার পাত্র হতে চাই না। বিদেশিরা বাংলাদেশে এসে ব্যবসা করে যাচ্ছে, কিন্তু বিপরীতে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা পাচ্ছে না।

আরএম/জেডএস