টিভি চ্যানেলের সম্প্রচারে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশনে সেট টপ বক্স ব্যবহারে একদিকে যেমন গ্রাহকের সংখ্যা জানা যাবে, অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বছরে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারবে।

রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) সিনিয়র সহ-সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী এ দাবি করেন। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে কত কেবল টিভির কত গ্রাহক রয়েছে, সেই সংখ্যা বাংলাদেশে কারো জানা নেই। কিন্তু সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন বা সেট টপ বক্স হওয়ার পরে সরকারের কাছে গ্রাহকের হিসাব থাকবে। এর মাধ্যমে এনবিআরের রাজস্ব আয় হবে বছরে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে যা ১০০ কোটি টাকার নিচে। 
 
তিনি বলেন, দেশে কয়েক কোটি সেট টপ বক্স লাগবে। তাই আমি মনে করি সেট টপ বক্স আমদানিতে নির্দিষ্ট হারে রেয়াত দেওয়া প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদী রাজস্ব আয়ে নজর দিলে দুটো লাভ হবে। সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে, অন্যদিকে গ্রাহকরা ডিজিটালাইজেশনের সুফল পাবেন।  

সেট টপ বক্স কী?

সেট টপ বক্স হলো এক ধরনের রিসিভার যন্ত্র; এটি টিভি ডিকোডার হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে মূলত অ্যানালগ ব্যবস্থায় কেবল টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার করা হয়। কেবল অপারেটরদের সার্ভার থেকে অ্যানালগ সিগন্যাল গ্রহণ করে ডিজিটালি টেলিভিশনে পাঠায়। এর চেয়ে নিখুঁত, ঝকঝকে ছবি পাওয়া যায় সেট টপ বক্স ব্যবহারে। 

অ্যানালগ ব্যবস্থায় ৬০টির মতো টিভি চ্যানেল দেখা গেলেও সেট টপ বক্সের মাধ্যমে গ্রাহকরা আড়াইশর মতো চ্যানেল দেখতে পারেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই সেট টপ বক্সের ব্যবহার করা হয়। দুই কোটিরও বেশি গ্রাহকের বাংলাদেশে গত এক দশকে বাংলাদেশে কয়েক লাখ গ্রাহক যন্ত্রটি নিলেও তা সংখ্যায় খুবই নগণ্য। 

সেট টপ বক্সের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এর মাধ্যমে দর্শকরা ঝকঝকে চ্যানেল পান। এ ইন্ডাস্ট্রির ডিজিটালাইজেশন না হওয়ায় কেবল টিভির গ্রাহকদের নির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায় না। ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেট টপ বক্স বসানো হলে দেশের প্রতিটি গ্রাহকের তথ্য অপারেটরদের কাছে থাকবে। সরকারের রাজস্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অপারেটরদেরও লাভ হবে।

বিজ্ঞাপনে বিল গ্রহণে উৎসে ভ্যাট আদায়ে দ্বৈত করের জটিলতা রয়েছে বলে প্রাক-বাজেট আলোচনায় জানায় অ্যাটকো। এছাড়া বিজ্ঞাপনে উৎস কর প্রত্যাহারেরও দাবি জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

এ সময় এনবিআর সদস্য জাকিয়া সুলতানা (ভ্যাট নীতি) জানান, বিজ্ঞাপনে যিনি চালান ইস্যু করবেন, তিনি যদি ভ্যাট দেন, তাহলে ডাবল হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি এভাবে সমাধান করা যায়।

একই দিন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও (নোয়াব) তাদের প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নেয়। এতে নোয়াবের প্রেসিডেন্ট এ কে আজাদ, নির্বাহী সদস্য সাংবাদিক মাহফুজ আনাম ও দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, এনবিআর সদস্য সামস উদ্দিন আহমেদ, ড. সহিদুল ইসলাম, মাসুদ সাদেক ও জাকিয়া সুলতানাসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।  

আরএম/আরএইচ