করের আওতা বৃদ্ধি করতে দেশে করযোগ্য প্রকৃত নাগরিকের সংখ্যা নিরূপণে ব্যাপকভিত্তিক জরিপ ও গবেষণায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)।

আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির সভাপতি 
শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম এ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী বলেন, দেশের অর্থনীতির পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত দশ বছরে বিপুল সংখ্যক মানুষ কর প্রদানে সামর্থ্যবান হয়েছেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে, এই মুহূর্তে দেশে করযোগ্য মানুষ অন্তত ২ কোটি। আবার কেউ বলছেন এই সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি। করযোগ্য নাগরিকদের সংখ্যা নিয়ে এই বিভ্রান্তি দূর করাতে কিংবা দেশে করযোগ্য প্রকৃত নাগরিকের সংখ্যা নিরূপণে এনবিআরের একটি ব্যাপকভিত্তিক জরিপ ও গবেষণা জরুরি। 

তিনি বলেন, এনবিআরের তথ্যানুযায়ী দেশে ইটিআইএনধারীর সংখ্যা ৭০ লাখের মতো। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন মাত্র ২৪ থেকে ২৫ লাখ। অথচ কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব টিআইএনধারীর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। রিটার্ন দাখিল না করা এ বিপুল পরিমাণ টিআইএনধারীকে কর নেটের আওতায় আনতে আইনের বাধ্যবাধতা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা দরকার।

বিদেশি নাগরিকদের করের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে রিনভী বলেন, বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন বিদেশি নাগরিক কাজ করেন। কিন্তু এনবিআরে আয়কর জমা দেন মাত্র ১৪ থেকে ১৫ হাজার বিদেশি নাগরিক। দেশে কর্মরত বিদেশিরা বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায় বলে এক গবেষণায় জানিয়েছে টিআইবি। বিদেশি নাগরিকদের করের আওতায় আনতে এনবিআরের উদ্যোগ আরও জোরালো করার প্রয়োজন।

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক রাশেদ বলেন, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল পদ্ধতিকে আরও জনপ্রিয় করতে ব্যাপকভিত্তিক প্রচারণা চালানো দরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েব সাইটটি আপগ্রেড করার প্রস্তাব করছি । এতে অনেক হালনাগাদ তথ্য ও পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না । একইসাথে রাজস্ব বোর্ডের গবেষণা সেলটি আরও কার্যকর ও যুগোপযোগী করার প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। আমাদের প্রস্তাব হলো একজন সদস্যের নেতৃত্বে গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগকে শক্তিশালী করা যেতে পারে ।

ওয়্যারহাউজ অটোমেশন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়ে ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে এনবিআর আইনি কাঠামোয় পরিবর্তনসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এ খাতে অনিয়ম রোধ এবং আরও রপ্তানিবান্ধব বন্ড ব্যবস্থাপনা তৈরির জন্য এনবিআরের নেওয়া বন্ডেড ওয়্যারহাউজ অটোমেশন প্রকল্পের কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করে পুরো প্রক্রিয়াকে অটোমেশনের আওতায় আনা দরকার।

আয়কর ও ভ্যাট আইনসহ এনবিআরের যেকোনো আইন বাস্তবায়নের আগে সম্ভাব্য প্রভাব যাচাই করার আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিক দৌলত আকতার মালা বলেন, যেকোনো আইন বাস্তবায়ন করার আগে যদি সম্ভাব্য প্রভাব যাচাই-বাছাই করা হয়, তাহলে আইন বাস্তবায়ন করার পরের জটিলতা তৈরি হয় না। যেমন- আয়কর আইনের খসড়া করার আগেই এ বিষয় যাচাই করা উচিত বলে মনে করি।

ইআরএফের অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে 
• কোনো ব্যবসায়ী যেন কর ফাঁকি দিতে না পারে, সেজন্য এনবিআরের অটোমেশন ও কঠোর মনিটরিংয়ের সুপারিশ।

• প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে, এই পাচার রোধে ২০১৩ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং নামে একটি আইন করা হয়েছিল। বাস্তবে এর অগ্রগতি কতটুকু সেটা আমরা জানি না। মুদ্রা পাচার রোধে ভারত অথবা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কঠোর আইন করা যায় কি না সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। 

• বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কর কাঠামো প্রণয়ন করা। এছাড়া আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিষয়ক অনেক সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ী, ভোক্তা, করদাতা কিংবা রাজস্বের ওপর কী প্রভাব ফেলছে তা বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে সংশোধনমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া ইত্যাদি। 

আরএম/এনএফ