অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা বিনিয়োগ নিয়ে নানা দিক থেকে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে শেয়ার বাজার সংশ্লিষ্টদের পাশে পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক।

মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুন বাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এনবিআরের কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক সভাপতির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তোলার বিধান বলবৎ রেখে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ অব্যাহত রাখার দাবি জানায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জের (সিএসই) মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম ফারুক।

তার প্রস্তাবের জবাবে এনবিআরের কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক বলেন, অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে যখন নানা দিক থেকে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তখন আপনাদের পাশে পাওয়া যায় না। আপনাদের ফোরাম থেকেও তখন কিছু বলা হয় না।

গোলাম ফারুক তার প্রস্তাবনায় বলেন, প্রস্তাবিত আয়কর আইন-২০২২ এ পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে কর দিলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তোলার বিধানটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, বিধানটি বলবৎ রাখা যেতে পারে। কারণ বিদ্যমান আইনের এই বিধান প্রস্তাবিত আয়কর আইনে অক্ষুণ্ন রাখা হলে বিভিন্ন শ্রেণির করদাতারা তাদের বৈধ উপায়ে উপার্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির সঙ্গে টাকা পাচারের ঝুঁকিও হ্রাস পাবে বলে মনে করি।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থ-বছরের বাজেট অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে বলা হয়, প্রচলিত আইনে যাই থাকুক না কেন, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে কর্তৃপক্ষসহ কেই প্রশ্ন করতে পারবে না। একই সময় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে, ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর দিলে, আয়করসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না।

লভ্যাংশ হতে উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল চেয়ে ফারুক আরও বলেন, খসড়া আয়কর আইনের ১০৯ ধারায় উৎসে কর কর্তনের হার কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ও নিবাসী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১০-১৫ শতাংশের বিধান রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানি তার মুনাফার ওপর কর দিয়ে পুনরায় লভ্যাংশ বিতরণের সময় কর কর্তন দ্বৈত করের সৃষ্টি করে। তাই এরূপ উৎসে কর পরিহার করা হলে অধিকতর লভ্যাংশ বন্টনের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং কর আদায় প্রক্রিয়া সহজতর হবে।

আলোচনায় ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার এম সাইফুর রহমান মজুমদার তার প্রস্তাবনায় বন্ড মার্কেট সম্প্রসারণে সব ধরনের বন্ডে অর্জিত সুদের ওপর প্রযোজ্য কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বন্ড মার্কেটের ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে আমাদের বন্ড মার্কেট খুবই ছোট পরিসরে রয়েছে। বর্তমানে জিরো কুপন বন্ডে অর্জিত সুদের ওপর কর সুবিধা রয়েছে। আমরা চাই কর্পোরেট বন্ড মার্কেটসহ সব ধরনের তালিকাভুক্ত বন্ডে একই ধরনের সুবিধা দেওয়া হলে শক্তিশালী বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠিত হবে।

এছাড়া তালিকাভুক্ত শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগকরা অর্থে কর রেয়াত, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ আয়করমুক্ত, করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা বাড়ানো, তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার কমানোর প্রস্তাব করেন।

অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক। এ সময় এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

আরএম/এসএম