>> বিমার দাবি পেতে লাগে না মানি রিসিপ্ট কিংবা প্রিমিয়াম রশিদ
>>  ২০২২ সালে এক লাখ মানুষকে বিমার আওতায় আনা হবে 
>>  ২০২১ সালে দাবি পরিশোধ করা হয় দুই হাজার কোটি টাকা

মো. আলা উদ্দিন আহমদ (আলা আহমদ); বহুজাতিক কোম্পানি মেটলাইফ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে বিশাল কর্মীবাহিনী। দেশে জীবন বিমা খাতে ৩০ শতাংশ অবদানই রাখছে মেটলাইফ।

২০২১ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আলা উদ্দিন আহমদ একজন ফেলো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। এর আগে মেটলাইফের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার, নেপালের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম), মালয়েশিয়ায় জয়েন্ট ভেঞ্চার এম-মেটলাইফের হেড অব স্ট্র্যাটেজি, বিজনেস প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন এবং মেটলাইফ হংকংয়ের জিএমসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে মো. আলা উদ্দিন আহমদ বলেন, বিমা খাতের আস্থার সংকট দূর করতে মেটলাইফ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে চায়। এ লক্ষ্যে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে বিমাদাবি পরিশোধের ওপর গুরুত্ব দিই। চলতি বছর (২০২২ সাল) নতুন করে আরও এক লাখ মানুষকে বিমার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।

দেশের বিমা খাতে করোনার প্রভাব, মেটলাইফের বর্তমান কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাহফুজুল ইসলাম

ঢাকা পোস্ট : মহামারি করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের বিমা খাতে এর প্রভাব কেমন দেখছেন?

আলা উদ্দিন আহমদ : বিমা খাতে নেতিবাচক বেশকিছু প্রভাব তো পড়েছেই। তবে, ইতিবাচক প্রভাবও রয়েছে । যেমন- মানুষ এখন নিজের বা পরিবারের সদস্যের স্বাস্থ্য বা আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। করোনায় বিমা বা আর্থিক নিরাপত্তার বিষয়ে সবার মাঝে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়েছে।

করোনায় গ্রাহকসেবার মান বজায় রাখার বিষয়টির ওপর এখন প্রাধান্য দিচ্ছি। আমরা এটি চ্যালেঞ্জ হিসেবেও নিয়েছি। সশরীরে গ্রাহকদের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার চেয়ে এখন আমরা পুরোপুরি ডিজিটাল সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ফলে অনেক নতুন নতুন গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : করোনার দুই বছরে পলিসির সংখ্যা কি বেড়েছে?

আলা উদ্দিন আহমদ : ২০২০ সালে করোনার শুরুর দিকে নতুন পলিসির সংখ্যা কমে গিয়েছিল, এখনও কম। তবে এখন যে পলিসিগুলো বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো বেশ কোয়ালিটি সম্পন্ন, আকারেও বড়। আন্ডার ইনস্যুরেন্সের বিষয়টি থাকছে না। যারা নতুন করে পলিসি নিচ্ছেন, তারা বুঝে শুনে চাহিদার কথা মাথায় রাখছেন।

মো. আলা উদ্দিন আহমদ, সিইও, মেটলাইফ বাংলাদেশ

ঢাকা পোস্ট : ২০২০-২১ সালে তামাদির সংখ্যা কি কমেছে?

আলা উদ্দিন আহমদ : লকডাউনে অনেকেই সময়মতো প্রিমিয়াম দিতে পারেননি কিংবা তারা ডিজিটাল লেনদেনের সঙ্গে অভ্যস্ত ছিলেন না। ২০২০ সালে তামাদির সংখ্যাটা কিছুটা বেড়ে যায়। তবে ২০২১ সালে এসে কমেছে, সেই সঙ্গে নতুন গ্রাহকও বেড়েছে। মার্কেটটা পুরো অ্যাডজাস্ট হয়েছে। আমরাও অ্যাডজাস্ট করেছি।

ঢাকা পোস্ট : করোনার সংক্রমণ কিছুদিন আগেও বেড়ে গিয়েছিল।  নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মেটলাইফের প্রস্তুতি কেমন?

আলা উদ্দিন আহমদ : করোনাকালে আমরা একটা নতুন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। ফলে পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিজিটালি গ্রাহকসেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতা বেড়েছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে প্রিমিয়াম দেওয়া যাচ্ছে। স্মার্ট কাস্টমার পোর্টালের মাধ্যমে পলিসি স্ট্যাটাস, মেয়াদপূর্তি ও প্রিমিয়াম দেওয়ার তারিখসহ বিমা পলিসি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সব তথ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সারাদেশে আমাদের প্রায় ২০ হাজার ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট কাজ করেন। করোনা মহামারিতেও নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় চার হাজার। যা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েট নিয়োগের প্রক্রিয়াটিও ডিজিটালি সম্পন্ন হয়েছে। ফলে দাপ্তরিক জটিলতা অনেকাংশে কমেছে। এখন আরও দক্ষতার সঙ্গে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

ঢাকা পোস্ট : করোনা বিমা নিয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

আলা উদ্দিন আহমদ : গত বছর দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের সময় ‘৩ ঘণ্টায় কোভিড ক্লেইমস ডিসিশন সার্ভিস’ এর আওতায় করোনা সেবা চালু করি। এ সেবার আওতায় ক্লেইম (দাবি) করলে আমরা তিন ঘণ্টার মধ্যে ক্লেইম ডিসিশন দিই; তিন কর্মদিবসের মধ্যে পেমেন্ট সম্পন্ন করি। অর্থাৎ, এ সেবার আওতায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া পলিসি হোল্ডারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়।

শুধু তা-ই নয়, তিন ঘণ্টায় কোভিড ক্লেইম ডিসিশন সেবা পেতে মেটলাইফের কোনো শাখায় যেতে হবে না। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ ই-মেইলে আবেদন করলেই দাবি পরিশোধ করা হবে। এ প্রোডাক্ট করোনার ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার পর এসেছে। ওমিক্রনেও আমরা চালু রেখেছি। আগামীতে করোনাভাইরাসের নতুন যত ভ্যারিয়েন্ট আসবে, সেগুলোতেও চালু রাখব।

করোনা বিমা করার পর কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে, সবধরনের ক্লেইম অনলাইনে কাগজপত্রসহ আবেদন করলে চিকিৎসা খরচসহ ক্ষতিপূরণ সাত থেকে দশ কর্মদিবসের মধ্যে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে।

ঢাকা পোস্ট : বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্য বলছে, বিমা কোম্পানিগুলো ৩০ শতাংশের বেশি ক্লেইম পরিশোধ করছে না। ক্লেইম শতভাগ নিষ্পত্তি করতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ বিষয়ে কী বলবেন?

আলা উদ্দিন আহমদ : নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে নিয়মিত নজরদারির বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। আমরা খুব দ্রুত ক্লেইম নিষ্পত্তি করি। পলিসি চালু থাকলে এবং পেমেন্ট রেগুলার হলে যত দ্রুত সম্ভব বিমাদাবি পরিশোধ করি। ২০২১ সালে মেটলাইফ দুই হাজার কোটি টাকারও বেশি বিমাদাবি পরিশোধ করেছে। এটি বড় ধরনের জাম্প। সামনের দিনগুলোতে এ কার্যক্রম আরও কীভাবে দ্রুত করা যায়, সে বিষয়ে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ঢাকা পোস্ট : বিমাদাবি উত্থাপনের সময় আনুষঙ্গিক কাগজপত্র নিয়ে অনেক গ্রাহক বিড়ম্বনায় পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে মেটলাইফ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?

আলা উদ্দিন আহমদ : সঠিক সময়ে বিমাদাবি পরিশোধ না করা এ খাতের ওপর মানুষের আস্থাহীনতার অন্যতম কারণ। মানুষের মধ্যে দ্বিধা থাকে যে মেয়াদ শেষে কিংবা দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর বিমাদাবি পাবে কি না? মেটলাইফের বিমাদাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া খুবই সহজ।

আমাদের কাছে আবেদনের জন্য দুই থেকে তিনটির বেশি পেপারসের প্রয়োজন হয় না। একটি ক্লেইম ফরমের প্রয়োজন, যেখানে পলিসি সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্যগুলো থাকে। এর সঙ্গে ডেথ সার্টিফিকেট, স্বাভাবিক মৃত্যুর বিমাদাবির ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি ডকুমেন্টের প্রয়োজন নেই।

মো. আলা উদ্দিন আহমদ, সিইও, মেটলাইফ বাংলাদেশ

 

বিমা করার সময় নেওয়া প্রিমিয়াম রিসিপ্টও জমা দিতে হয় না। কারণ, গ্রাহক প্রিমিয়াম দিয়েছেন কি না, সেই তথ্য মেটলাইফের সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে। আমরা সবসময় চেষ্টা করি যাতে কাগজপত্র জোগাড়ে গ্রাহককে কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয়।

ঢাকা পোস্ট : মেয়াদপূর্তির ক্ষেত্রে কীভাবে বিমাদাবি নিষ্পত্তি করে মেটলাইফ?

আলা উদ্দিন আহমদ : মেয়াদপূর্তির ক্ষেত্রে বিমাদাবি নিষ্পত্তি আরও সহজ। অরিজিনাল পলিসি ডকুমেন্ট ও ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্যের কপি অনলাইনে জমা দিলেই হয়। এক্ষেত্রেও সবগুলো প্রিমিয়াম রিসিপ্ট জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

ঢাকা পোস্ট : মেটলাইফ সাধারণত কত দিনের মধ্যে বিমাদাবি পরিশোধ করে?

আলা উদ্দিন আহমদ : করোনায় মৃত্যু ছাড়া সাধারণ ক্লেইম যেমন- হতাহত ও মৃত্যু এবং মেয়াদপূর্তি বিমার দাবি পরিশোধ করা হয় সাত থেকে দশ কর্মদিবসের মধ্যে। তবে শর্ত হলো, আবেদন সঠিক ও আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সঠিকভাবে দিতে হয়। এক্ষেত্রে অফিসে এসে আবেদন করতে হয় না। অনলাইনে আবেদন করলেই আমরা যাচাই-বাছাই করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিই। তবে জটিল কিংবা কাগজপত্রে সমস্যা থাকলে একটু বিলম্ব হয়।

ঢাকা পোস্ট : মেটলাইফ নিয়ে ২০২২ সালের পরিকল্পনা কী?

আলা উদ্দিন আহমদ : ২০২২ সালের পরিকল্পনায় কয়েকটি বিষয় আমরা মাথায় রাখছি। প্রথমত, মেটলাইফের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল বা এজেন্ট নেটওয়ার্ক আরও বেশি উন্নত করা। আমরা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাসোসিয়েটদের জন্য একটি ডিজিটাল সেলস প্ল্যাটফর্ম চালু করেছি, যেখানে একটি স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের মাধ্যমেই সব কাজ করা যায়। এতে সময় সাশ্রয় হবে, দাপ্তরিক জটিলতা কমে আসবে এবং আরও দক্ষতার সঙ্গে সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে আমাদের গ্রাহকদের বিমাসেবা নেওয়ার জন্য পেপার-বেজড ডকুমেন্টের ব্যবহারও কমে আসবে এবং তাদের ডিজিটাল অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হবে।

দ্বিতীয়ত, গ্রাহকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে নতুন নতুন প্রোটেকশন প্ল্যান নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে। যেমন- গত বছর ক্রিটিক্যাল ইলনেস ইনস্যুরেন্স প্রোটেকশন প্ল্যান এবং হজ ও ওমরাহ প্রোটেকশন প্ল্যান চালু করেছে মেটলাইফ। এ বছর লাইফ প্রটেকশন ও শিক্ষাবিষয়ক পলিসি নিয়ে আমরা কাজ করছি।

তৃতীয়ত, ব্যাংকাস্যুরেন্স— যার মাধ্যমে ব্যাংক থেকেই গ্রাহকরা বিমা পলিসি নিতে পারবেন। প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিমাগ্রহীতার সংখ্যা অনেক কম। এজেন্টের পাশাপাশি ব্যাংকগুলো যদি বিমা প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারে, তাহলে অনেক নতুন নতুন গ্রাহকের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারব। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করছে। আশা করছি শিগগিরই এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে। ব্যাংকাস্যুরেন্স হয়ে গেলে গোটা ইন্ডাস্ট্রি পাল্টে যাবে।

ঢাকা পোস্ট : মেটলাইফের বর্তমান গ্রাহক কত? এ বছর কতসংখ্যক গ্রাহকের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন?

আলা উদ্দিন আহমদ : বর্তমানে দশ লাখের বেশি গ্রাহককে আমরা বিমাসেবা দিচ্ছি। এ বছর নতুন করে আরও এক লাখ গ্রাহককে বিমাসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। গ্রাহক বৃদ্ধিতে তিন-চার বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা রয়েছে। বছর শেষে যোগ-বিয়োগ করে নিট পলিসি বাড়াতে চাই।

নিজ কার্যালয়ে মো. আলা উদ্দিন আহমদ

ঢাকা পোস্ট : সাধারণ মানুষের জন্য নতুন কত ধরনের পলিসি আনার পরিকল্পনা রয়েছে?

আলা উদ্দিন আহমদ : গ্রাহকের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আমাদের বেশকিছু পলিসি রয়েছে। এর মধ্যে ডিপোজিট প্রোটেকশন স্কিম, এডুকেশন প্রোটেকশন প্ল্যান অর্থাৎ শিক্ষা বিমার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে।

গত বছর চালু করা থ্রি পেমেন্ট প্ল্যান, হজ ও ওমরাহ প্ল্যান ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। নতুন করে ক্রিটিক্যাল ইলনেস পলিসি প্রোটেকশন প্ল্যান চালু করব। এ বিমার আওতায় ৮০ বছর পর্যন্ত মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাদের ৫২টি রোগের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে।

এছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য থ্রি সিক্সটি (৩৬০) হেলথ নামে নতুন ধরনের পণ্য চালু করেছি। ইতোমধ্যে একটি মোবাইল অ্যাপও চালু করেছে মেটলাইফ। এর মাধ্যমে মানুষের রোগ প্রতিরোধ, প্রাথমিক রোগ নির্ণয়, জটিল রোগের ক্ষেত্রে সহজে চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাবে।

ঢাকা পোস্ট : দেশের জনসংখ্যার তুলনায় বিমার সংখ্যা অনেক কম। এর কারণ কী বলে মনে করেন?

আলা উদ্দিন আহমদ : অনেকে এখনও বিমার সুবিধা সম্পর্কে অবগত নন। সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমাদের নিজস্ব কিছু জরিপে একটি বিষয় দেখা গেছে— চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর জন্য মানুষ নিজের সঞ্চয় থেকে বা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে থাকে। অথচ বিমার মাধ্যমেও যে আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া যায়, সে বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়নি। আমাদের দেশে অনেকেই বিমাকে শুধুমাত্র সঞ্চয়ের একটা উপায় হিসেবে ধরে নিয়েছেন। আর্থিক নিরাপত্তা বা ভবিষ্যতের জন্য বিমার গুরুত্ব আরও প্রচার করা প্রয়োজন।

ঢাকা পোস্ট : এ বছর মেটলাইফের গ্রোথ কেমন হবে বলে আশা করছেন?

আলা উদ্দিন আহমদ : কত গ্রোথ হবে, তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবে আমরা স্বচ্ছ কোম্পানি। গ্রাহকদের দাবি স্বচ্ছতার সঙ্গে  পরিশোধ করতে চাই।

ঢাকা পোস্ট : মেটলাইফ প্রতি বছর ভালো অঙ্কের মুনাফা করছে, আর্থিক প্রতিবেদনও স্বচ্ছ। কেন তারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না?

আলা উদ্দিন আহমদ : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আমরা যেভাবে অবদান রাখতে চেয়েছি, সেভাবেই আমরা করতে পেরেছি। সবচেয়ে বেশি করদাতার তালিকায় রয়েছি আমরা। স্বচ্ছতার সঙ্গে বিমাদাবি পরিশোধ করতে পারছি। আমরা দেশে দুই বিলিয়ন ডলারের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছি (সরকারি বন্ড, কমার্শিয়াল বন্ড, প্রাণের বন্ড)। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারছি। এক কথায়, আমরা দেশের মানুষকে বিমাসেবা দিচ্ছি, সঙ্গে আর্থিক নিরাপত্তাও দিচ্ছি। এভাবেই দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখতে পারছি আমরা। তাই অন্য ফরমেটে যাচ্ছি না।

ঢাকা পোস্ট : বিমা খাতে আস্থার সংকটের অভিযোগ পুরনো। উত্তরণের উপায় এবং সাধারণ মানুষের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?

আলা উদ্দিন আহমদ : আমরা বিশ্বাস করি, মেটলাইফ গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। গ্রাহক যদি তার চাহিদা অনুযায়ী পলিসি গ্রহণ করে, সম্পূর্ণ মেয়াদ পর্যন্ত অব্যাহত রাখে, বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি প্রয়োজনীয় সেবা অব্যাহত রাখে এবং দ্রুততার সঙ্গে বিমা নিষ্পত্তি করে তাহলে এ খাতে মানুষের আস্থা বাড়বে। এছাড়া আস্থা বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি, সবাই মিলে কাজ করলে বিমা খাতে আস্থা ফিরবে।

ঢাকা পোস্ট : আপনাকে ধন্যবাদ।

আলা উদ্দিন আহমদ : ঢাকা পোস্টকেও ধন্যবাদ।

এমআই/আরএইচ/এমএআর/