বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এশিয়ার কিছু দেশের ও আফ্রিকার ৮০ শতাংশ মানুষ এখনও ইউনানি, হোমিওপ্যাথি ও ভেষজ ওষুধের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ ইউনানি ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে থাকেন। ইউরোপে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ মানুষ ভেষজ পণ্যের প্রতি আস্থাশীল। দিন দিন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি ফুড সাপ্লিমেন্টের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হার্বাল, ইউনানি মেডিসিন ও ন্যাচারাল প্রডাক্টসের উন্নয়ন ও রপ্তানি বিষয়ক এফবিসিসিআই’র স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম বৈঠকে বক্তারা এসব তথ্য উপস্থাপন করেন। তারা বলেন, দেশের স্বাস্থ্য সেবায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার পরও এ শিল্প সংকুচিত হয়ে আসছে।

এ শিল্পের উন্নয়নে ওষুধ প্রশাসনে আলাদা সেল গঠনের দাবি জানান উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী হার্বাল ও ইউনানি পণ্যের বাজার ১৪১ বিলিয়ন ডলার। প্রতি বছর এ বাজার ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু বিপুল চাহিদা থাকার পরও আইনি জটিলতায় হার্বাল ও ইউনানি পণ্য রপ্তানি করা যাচ্ছে না। কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, সারা বিশ্বে এসব পণ্যকে ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট বা ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করার কারণে এসব পণ্য রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

ওষুধ প্রশাসনে আলাদা সেল গঠিত হলে ইউনানি ও ভেষজ পণ্যের এসব সমস্যা সমাধান সহজ বলে দাবি করেন কমিটির সদস্যরা।

ইউনানি ও ভেষজ পণ্যের ৯০ শতাংশ কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। পতিত জমিতে কিংবা অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরকারি বা পাবলিক-প্রাইভেট যৌথ উদ্যোগে হার্বাল গার্ডেন প্রতিষ্ঠার সুপারিশও আসে বৈঠকে। বক্তারা বলেন, দেশে ওষুধি গাছের চাষ বাড়াতে পারলে একদিকে আমদানি নির্ভরতা কমবে, আরেকদিকে রপ্তানির সুযোগও তৈরি হবে।

এছাড়া মেডিকেল কলেজের পাঠ্যক্রমে ইউনানি ও হার্বাল চিকিৎসাকে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান এ খাতের উদ্যোক্তারা।

বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, এ শিল্পের উন্নয়নে কমিটির সুপারিশগুলো নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা করবে এফবিসিসিআই। এজন্য কমিটিকে এ শিল্পের সম্ভাবনা, সমস্যা-সম্ভাব্য সমাধান বিষয়ে একটি সুপারিশ তৈরির আহ্বান জানান।

ইউনানি ও হার্বাল পণ্যের প্রচারে দেশের প্রতিটি জেলায় সাত দিনব্যাপী মেলা আয়োজনের প্রস্তাব দেন কমিটির ডিরেক্টর-ইন-চার্জ ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক মো. রেজাউল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে এসব পণ্যের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ানো সম্ভব হবে।

কমিটির চেয়ারম্যান রকিব মোহাম্মদ ফখরুল জানান, ইউনানি শিল্পের উন্নয়নে কর্মপন্থা প্রণয়নে একটি সাব কমিটি গঠন করা হবে।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপমন্ত্রী ও মুন্সী গ্রুপের চেয়ারম্যান এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী। তিনি বলেন, ইউনানি শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন দেশে আলাদা মন্ত্রণালয় রয়েছে। বাংলাদেশেও একই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

এসআই/এসএসএইচ