অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

‘৪৩ হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের হাতে সমগ্র আমানতের অর্ধেক পুঞ্জিভূত রয়েছে। যা বর্তমানে বাংলাদেশে বৈষম্য ও অসমতার বড় উদাহরণ।’ 

রোববার (২২ মে ) ‘বৈষম্য হ্রাস ও শোভন সমাজ প্রতিষ্ঠা : রাষ্ট্র-সরকার টাকা পয়সা পাবে কোথায়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এ কথা বলেন। 

তিনি বলেন, বৈষম্যর সবচেয়ে খারাপ রূপ হলো সুযোগের বৈষম্য। বাংলাদেশে আড়াই কোটি মানুষ কর দেওয়ার যোগ্য। কিন্তু কর দেন মাত্র ২৫ লাখ মানুষ। 

তিনি আরও বলেন, সমাজকে আরও শোভন করার জন্য শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে। কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের আলোকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় একমুখী শিক্ষার প্রচলন করতে হবে। বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের বড় অংশকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধাভোগী সম্পর্কে সরকারের কতটুকু নজর আছে এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। ২৫ লাখ ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা দিতে ব্যাঙ্কের ম্যানেজাররা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তারা চেনাজানা লোকদেরই ঋণ দিতে ইচ্ছুক। এই সমস্যা সমাধানে বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন, পিকেএসএফ-কে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতায়িত করতে হবে, প্রয়োজনে এসব উদ্যোক্তাদের ১ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে হবে এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডের আশ্রয় নিতে হবে। 

বর্তমানে বাংলাদেশে বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ৪৩ হাজার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের হাতে এখন সমগ্র ব্যাঙ্ক আমানতের অর্ধেক পুঞ্জিভূত।

গণমানুষের অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সদ্য প্রকাশিত ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র : ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ গবেষণাগ্রন্থের বিষয়বস্তুর ওপর ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। এ গবেষণাগ্রন্থের ওপর ১৩ সিরিজ জুম ওয়েবিনার এটি।

ওয়েবিনারে আলোচনায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বিশ্বের নিরাপত্তা বিধানের প্রধান দায়িত্ব যে বৃহৎ শক্তিগুলোর- তারাই মানুষের ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানোর কাজটি করছে। বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ এবং যুদ্ধাস্ত্রের জন্য যে পরিমাণ ব্যয় করা হয় তার ১ শতাংশ টাকাও মানুষের জন্য ব্যয় করা হয় না। বাংলাদেশে ধনিক শ্রেণির বৃদ্ধির হার বিশ্বে সর্বোচ্চ, একই সাথে পরিবেশ দূষণের হারও সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে বৃহৎ প্রকল্পগুলোর নির্মাণ ব্যয় বিশ্বে সর্বোচ্চ। কারণ, এর মধ্যে আছে ভয়াবহ দুর্নীতি, যেটা সম্ভব হয় জবাবদিহিতার অভাবে।

তিনি বলেন, বর্তমান শোভন সমাজ গড়তে হলে বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করতে হবে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপপুর, মাতারবাড়ির মতো প্রাণবিনাশী বা ভুল প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করতে হবে। কারণ, এগুলো মানুষের দারিদ্রতা বৃদ্ধি করছে। 

ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহসভাপতি এ জেড এম সালেহ। ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে ১৮ জন কালো টাকা, অর্থ পাচার, সম্পদ-কর ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং অধ্যাপক বারকাতের বইয়ের প্রশংসা করেন।  আলোচকরা তাদের কাছে অংশগ্রহণকারীদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবুল বারকাতের ২০ বছরের গবেষণার ফসল ‘বড় পর্দায় সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্র : ভাইরাসের মহাবিপর্যয় থেকে শোভন বাংলাদেশের সন্ধানে’ বইটি যৌথভাবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও মুক্তবুদ্ধি প্রকাশনা। 

আরএম/এইচকে