২৫০০০ কোটি টাকার ফান্ড
খেলাপি হার ২০% হলেও তহবিল পরিচালনায় যোগ্য হবে ব্যাংক
ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের জন্য গঠিত ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল পরিচালনার জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠান হতে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন থেকে কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ২০ শতাংশ খেলাপি ঋণ হলেও তহবিল অর্থ নিতে পারবে। এতদিন ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি হলে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতো।
বুধবার (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পুনঃ অর্থায়ন এবং প্রাক-অর্থায়ন স্কিমের আওতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ার জন্য প্রযোজ্য শ্রেণিবিন্যাসিত ঋণ ও বিনিয়োগের হার পুনঃ নির্ধারণ করে সর্বোচ্চ ২০% করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত সার্কুলারের আগের নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অন্য এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে সরকারের অগ্রাধিকার খাত হিসেবে উদ্যোক্তাদের চাহিদা বিবেচনায় স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ৩ বছর মেয়াদি ২৫ হাজার কোটি টাকার স্কিমটি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে ২০২২ সালে জুলাই মাসে সিএসএমইতে ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত এ তহবিলটির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘সিএমএসএমই খাতে মেয়াদি ঋণের বিপরীতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম’।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই তহবিল থেকে ২ শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করবে। গ্রাহক পর্যায়ে যার সর্বোচ্চ সুদের হার ৭ শতাংশ।
প্রাথমিকভাবে স্কিমটির মেয়াদ হবে ৩ বছর। আর গ্রাহক পর্যায়ে গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর। তহবিলের আকার ২৫ হাজার কোটি হলেও প্রয়োজনে তা বাড়ানো হবে।
সাকুর্লারে উল্লেখ করা হয়, নারী উদ্যোক্তা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন উদ্যোক্তা এবং যে কোনো দুর্যোগে (যেমন : নদী ভাঙন, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, মঙ্গা, অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, ভবনধস, কোভিড-১৯ এর মতো অতিমারি ইত্যাদি) ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে এ স্কিমের আওতায় পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা দিতে হবে। বিতরণ করা মোট ঋণের ন্যূনতম ৭০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবা খাতে এবং সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ব্যবসা খাতে প্রদান করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মাঝে এবং সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ করতে সীমা বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
কোনো ধরনের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই তহবিল নেওয়ার যোগ্য হবে এমন শর্তে বলা হয়েছিল, কোনো ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণ/বিনিয়োগের হার ১০ শতাংশের কম হতে হবে, ন্যূনতম ৩ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নতুন নির্দেশনায় শ্রেণীকৃত ঋণ ও বিনিয়োগের হার ১০ শতাংশের জায়গায় ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর গোপন করে রাখা বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ পেতে শুরু করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, মাত্র এক বছরে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বেড়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকায়। সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার ৪০ শতাংশ ছাড়িয়েছে, আর বেসরকারি খাতেও তা ১০ শতাংশের বেশি।
এসআই/বিআরইউ