গত ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জন শ্রমিক নিহত হন। সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। ১৯৮২ সালে পাকিস্তানের সেজান জুস আমদানির মধ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন আবুল হাসেম। পরবর্তীতে সেজান জুসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের উৎপাদনে আসে তার কোম্পানি। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তারা নিয়েছে মোটা অংকের ঋণ।

সজীব গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সজীব করপোরেশন, হাসেম ফুডস লিমিটেড, হাসেম অটো রাইস মিলস, সজীব ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, হাসেম অ্যাগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড, তাকফুল ইসলামী বিমা লিমিটেড, হাসেম ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড, সজীব হোমস লিমিটেড, মারস ইন্টারন্যাশনাল, সজীব লজিস্টিকস ও স্যাভি ফুডস।

বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, এক দশক আগেও গ্রুপটির আকার ছিল ৫০০ কোটি টাকার মতো। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গ্রুপটির ১১ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা।  

বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সজীব করপোরেশনের নামে ঋণ আছে ৩৬০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় রাজধানীর ফার্মগেটে। আর হাসেম রাইস মিলস লিমিটেডের নামে ব্যাংকঋণ আছে ৩৩৮ কোটি টাকা। চাল উৎপাদনের এ মিলের অবস্থান রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। 

এছাড়া হাসেম ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেডের নামে ২০১ কোটি, সজীব লজিস্টিকস লিমিটেডের নামে ৩৮ কোটি, সজীব হোমস লিমিটেডের নামে ২৯ কোটি, হাসেম অ্যাগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের নামে ২০ কোটি, হাসেম অটো রাইস মিলের নামে ৮ কোটি, স্যাভি ফুডস লিমিটেডের নামে ৩ কোটি এবং মারস ইন্টারন্যাশনালের নামে ২১ লাখ টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় উৎপাদন হতো ‘সেজান জুস’। সেখানে গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে শিশু ও নারীসহ ৫২ জন শ্রমিক প্রাণ হারান।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও তার চার ছেলেসহ ঊর্ধ্বতন আট কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। আসামিদের মধ্যে আছেন হাসেমের চার ছেলে। তারা কোম্পানির পরিচালক। তারা হলেন- হাসীব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম ও তানজিম ইব্রাহীম।

এ পরিস্থিতিতে সজীব গ্রুপকে দেওয়া ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা।  কীভাবে ঋণের অর্থ আদায় করবেন এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গ্রুপটির চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন সবাই গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের ভবিষ্যতে কী অবস্থা হবে, উৎপাদনে থাকবে কি না, এসব বিষয় আগে দেখতে হবে। আগামীতে কী হবে এটা বলা যাচ্ছে না। তারা ঋণ রিসিডিউল করেছে। তবে এরপর নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছে।’

বেসিক ব্যাংকেও ঋণ আছে সজিব গ্রুপের। এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকে ৮ কোটি টাকার ঋণ আছে। অগ্নিকাণ্ডের পর তাদের কারখানায় আমাদের শাখা ম্যানেজার গিয়েছিলেন। ঋণের বিপরীতে আমাদের বিমা করা আছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’ 

এসআই/ওএফ/জেএস