বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় উৎস প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। অনেক দিন ধরে এর প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও এবার কমতে শুরু করেছে। সবশেষ আগস্ট মা‌সে জুলাইয়ের চেয়ে কম এবং জুলাইয়ে জুনের চেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রবাহ এখন নিম্নমুখী। 

আগস্ট মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮১ কোটি মা‌র্কিন ডলার। যা আগের মাস জুলাই‌য়ের চেয়ে ৬ কোটি ১৪ লাখ ডলার কম। এছাড়া আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ কো‌টি ৩৮ লাখ বা প্রায় ৮ শতাংশ কম।

বুধবার (১ সে‌প্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, আগ‌স্টে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৮১ কোটি মার্কিন ডলার (১.৮১ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ২০ পয়সা ধ‌রে) যার পরিমাণ ১৫ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ কম। গত বছরের আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার।

এর আ‌গে চল‌তি বছ‌রের জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। যা ছিল তার আগের মাস জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম। এছাড়া আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম।  

এছাড়া চল‌তি ২০২১-২২ অর্থবছ‌রের প্রথম দুই মা‌সে (জুলাই-আগস্ট) মোট প্রবাসী আয় এ‌সে‌ছে ৩৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। গত অর্থবছ‌রের প্রথম দুই মা‌সে রে‌মিট্যান্স এ‌সে‌ছিল ৪৫৬ কোটি ২০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ৩৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৪২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৩৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

বরাবরের মতো আগ‌স্টেও বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে। ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ৫০ কোটি ৮৯ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকে এসেছে ১৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৬ কোটি ২৫ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ডলার এবং জনতার মাধ্যমে সা‌ড়ে ৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এর আগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি বাংলাদেশে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগী। এছাড়া ঈদ ও উৎসবে বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরকারের প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি এক শতাংশ দেওয়ার অফার দিচ্ছে। এতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হচ্ছেন প্রবাসীরা।

এসআই/জেডএস/জেএস