করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হচ্ছে, শিল্প উদ্যোক্তারা হাতে নিচ্ছেন নতুন নতুন প্রকল্প। আবার অনেকে ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। যার কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বাড়ছে। ফলে এ খাতে বাড়ছে ঋণের চাহিদাও।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এ খাতে মোট এক লাখ ৬ হাজার ৫৯৬ কোটি ৮২ টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছে। ২০২০ সালের একই সময় এর পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১১ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে মোট শিল্প ঋণের মধ্যে বড় শিল্পে ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে ৮৭ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা, মাঝারি শিল্পে ১০ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র বা ছোট শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৮ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা।

পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে করোনার সংক্রমণ ও প্রাদুর্ভাবের কারণে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ কমেছিল। তবে সরকারের বিশেষ প্রণোদনার ঋণ প্রবাহ বাড়ায় সা‌র্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এতে করে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে উন্নতি হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের অক্টোবরে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার আরও বেড়েছে। বেসরকারি খাতে ওই মাসে ঋণের পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে মোট তিন লাখ ৪ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬০ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৪৪ হাজার ৩৫ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

এদিকে ঋণ বিতরণ বাড়লেও আদায় পরিস্থিতিতে অবনতি হয়েছে। হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে শিল্প ঋণ আদায় হয়েছে ৮২ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালে একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৮৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। এক বছর আদায় কমেছে এক দশমিক ৮৯ শতাংশ।

ঋণ আদায়ের সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণও কমেছে। এ বছর তৃতীয় প্রান্তিকে এক দশমিক ২৪ শতাংশ কমে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ৮৪ হাজার ৮৩৭ কোটি ৫২ লাখ টাকায় নেমেছে।

এছাড়া চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) শিল্প ঋণ আদায় হয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার ১৭ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে আদায় বেড়েছে ২৪ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা। আর বকেয়া ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ১৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকায়।

গত বছরের তুলনায় এ বছর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সার্বিক মেয়াদি শিল্প ঋণ বিতরণ কমেছে ৪ দশমিক ০২ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে বড় শিল্পের মেয়াদি ঋণ বিতরণ হয়েছে ১১ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। তবে মাঝারি শিল্পে মেয়াদি ঋণ ৩৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমে এক হাজার ৩১৮ কোটি টাকায় নেমেছে। আর ক্ষুদ্র শিল্পের মেয়াদি ঋণ বিতরণ ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দাঁড়ায় এক হাজার ৬৫৯ কোটি টাকায়।

জুন-সেপ্টেম্বর সময়ে চলতি মূলধন ঋণ ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়ে বিতরণ হয়েছে ৯১ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। আগের বছর একই সময় ছিল ৭৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে ব্যাংকগুলো চলতি মূলধন ঋণ দিয়েছিল ৮৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতি কিছু উন্নতি হওয়ায় শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বাড়ছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বাড়ছে। অর্থনীতিতে কর্মযজ্ঞ বেড়ে যাওয়ায় ঋণের চাহিদা বেড়েছে।

এসআই/এমএইচএস