বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগ সুবিধা চায় সিএসই
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত (কালো টাকা সাদা) অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা চেয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।
শনিবার (১১ জুন) জাতীয় বাজেট ২০২২-২০২৩ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে এ সুবিধা চান সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিষয় পুনঃবিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
সিএসইর চেয়ারম্যান লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিগত অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো বাজারবান্ধব ছিল। এ বছর সিএসইর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল যে, বিদ্যমান বিধানগুলো যেন অপরিবর্তিত থাকে। বাজেটে সব বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে স্টক এক্সচেঞ্জ-এর সদস্যদের লেনদেনের ওপর বিদ্যমান উৎস কর শূন্য দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছিল, যা বাজেটে বিবেচিত হয়নি। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পরিচালন খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে ব্রোকারেজ সেবার কমিশন অত্যন্ত কমে আসার কারণে এই কর্তন করা অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর করদায় হিসেবে বেশি হয়। তাই উৎসে করহার হ্রাসে আমাদের প্রস্তাব পুনঃবিবেচনার জন্য অনুরোধ জানান।
পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসা তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ১০ শতাংশ বা তার কম শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তরকারী লিস্টেড কোম্পানির করহার না কমিয়ে আগের হার অর্থাৎ ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের কর কমানোর ঘোষণাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
তবে পুঁজিবাজারে ভাল কোম্পানির তালিকাভুক্তিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা যেতে পারে, বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান খুবই কম। তাই ভাল কোম্পানি এই বাজারে আসতে আগ্রহী হয় না। কারণ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে বিভিন্ন ধরনের কমপ্লায়েন্স পরিপালন করতে হয়। এতে কোম্পানিগুলোকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফলে কর হার রেয়াতের প্রকৃত কোনো সুবিধা ভোগ করা যায় না।
অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করহার কমিয়ে তালিকা বহির্ভূত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কর হারের ব্যবধান বাড়ানো হলে কর সুবিধা রেয়াতের জন্য ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবে। এতে একদিকে পুঁজিবাজার সমৃদ্ধ হবে, অন্যদিকে লেনদেন বাড়লে তা থেকে বাড়তি কর আদায় হবে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও জাবাদিহিতা বাড়ে। বিভিন্ন সংস্থার তদারকিতে থাকতে হয় বিধায় কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমে আসে। তাতে সরকারের কর সংগ্রহ নিশ্চিত হয়।
তাছাড়া সিএসই বাংলাদেশে প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এটি গঠন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কারিগরি সহায়তা, আইন-কানুন প্রণয়ন, প্রশিক্ষণ প্রদান ও গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে বলে উল্লেখ করেন সিএসই চেয়ারম্যান।
এসব বিষয় বিবেচনা করে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য বর্তমানে বিদ্যমান প্রযোজ্য কর্পোরেট করহার যা ৩০ শতাংশ, তা জুন ২০২৫ পর্যন্ত শূন্য হারে নির্ধারণ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিক্রির কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হলেও ঘোষিত বাজেটে এর কোনো পরিকল্পনা পরিলক্ষিত হয়নি। অর্থায়নের উৎস হিসেবে শেয়ার অফ লোড করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এবং এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো কর ছাড় থাকতে পারে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা রহিত করা হয়েছে। এই সুবিধা আগামী বছর পর্যন্ত বহাল রাখার জন্য আমরা বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এতে বাজার যেমন শক্তিশালী হবে তেমনি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, পাশাপাশি অর্থ পাচারও কমবে বলে আমরা আশা করছি।
তিনি বলেন, সাধারণত স্বল্পমূলধনী কোম্পানিগুলো প্রাইভেট হিসেবে নিবন্ধিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কাঠামো দুর্বল হওয়াতে সরকারের তেমন কোনো রাজস্ব আদায় হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এসএমই বোর্ড এর মাধ্যমে স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করছে। আমরা তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানির জন্য প্রথম ৩ বছর শূন্য হারে এবং পরে ১৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছিলাম যা সুবিবেচিত হয়নি। পুঁজিবাজারে এসএমই বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী তালিকাভুক্ত হলে অধিক সংখ্যক কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড থেকে পাবলিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হবে এবং একটি মানসম্মত কর্পোরেট কাঠামো এবং রিপোটিং-এ অভ্যস্ত হবে যা থেকে সরকারের প্রত্যক্ষ করের পাশাপাশি পরোক্ষ করও বৃদ্ধি পাবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ বাবদ আয় থেকে কেটে রাখা করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব করছি। নিয়ম অনুসারে প্রতিটি কোম্পানিকে তার আয়ের উপর কর দিতে হয়। এরপর নিট মুনাফা নির্ধারিত হয়। এই মুনাফা থেকে কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করলে এবং এই লভ্যাংশ বিতরণের সময় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে আগ্রিম কর কেটে দিতে হয়। পরে আবার লভ্যাংশ গ্রহীতার ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্নের সময় তার উপর প্রযোজ্য হারে কর প্রদান করতে হয়। এইভাবে কর প্রদান দ্বৈত কর নীতির আওতায় পড়ে। এক্ষেত্রে অগ্রিম করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
এছাড়াও তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্ত করা, এই করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা, মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্ত করা, এই মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশকে সম্পূর্ণ আয়কর মুক্ত রাখা যেতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে প্রসারিত হতে উৎসাহিত করার জন্য এই সুবিধা দেওয়া আহ্বান জানানো হয়।
এমআই/আরএম/জেডএস