কোনো কারণ ছাড়াই লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়া ওরিয়ন গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বেচে দিচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- ওরিয়ন ইনফিউশন এবং ওরিয়ন ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেড। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ডিএসইর তথ্য মতে, চলতি বছরের ২৮ জুলাই থেকে ১১ অক্টোবর সময়ে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আর ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোম্পানি দুটির শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তাদের হাতে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের প্রায় ১৪ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে। আর বিদেশিরা বিক্রি করেছে তাদের হাতে থাকা দশমিক ২৩ শতাংশ শেয়ার। এই শেয়ার কিনেছেন সাধারণ শেয়ারহোল্ডারা।

এছাড়াও ওরিয়ন ফার্মার ২ শতাংশের বেশি শেয়ার বিক্রি করেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর বিদেশিরা বিক্রি করেছে দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার।

ডিএসইর তথ্য মতে, ছোট মূলধনী কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন ১৯৯৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। চলতি বছরের ১ আগস্ট শেয়ারটির দাম ছিল ১১৭ টাকা ১০ পয়সা। এই সময়ের মধ্যে ৮০৬ টাকা ৯০ পয়সা দাম বেড়েছে। আজ (১২ অক্টোবর) সোয়া ১২টায় সময় সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৯২৪ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৮ গুণ দাম বেড়েছে শেয়ারটির।

অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশিরা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিয়েছে। ডিএসইর তথ্য অনুসারে, ৩১ আগস্ট কোম্পানিটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২১ দশমিক ৪১ শতাংশ। এক মাস পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের শেয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশে। অর্থাৎ প্রায় ১৪ শতাংশ কমেছে।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ৩১ আগস্ট বিদেশিদের হাতে ছিল দশমকি ২৭ শতাংশ শেয়ার। ৩০ সেপ্টেম্বর শেয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪ শতাংশে। অর্থাৎ দশমিক ২৩ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে। বিক্রি হওয়া এই শেয়ার এই শেয়ার কিনেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ফলে আগস্ট মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা ৩৭ দশমিক ৭১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ সেপ্টেম্বর দাঁড়িয়েছে ৫১ দশমিক ৮৫ শতাংশে। তবে এই সময়ে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কেনা-বেচা হয়নি। তাদের হাতে কোম্পানির ৪০ দশমিক ৬১ শতাংশ রয়েছে।

অপর কোম্পানি ওরিয়ন ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেড। এই কোম্পানির শেয়ার ২৮ জুলাই ছিল ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা। সেখান থেকে ৬০ টাকা বেড়ে মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১৩৮ টাকা ৬০ পয়সা। প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

শেয়ারের দাম দ্বিগুণ বাড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের হাতের হাতে শেয়ার বিক্রি করেছে। ডিএসইর তথ্য মতে, ৩১ আগস্ট প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ছিল ২৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে। অর্থাৎ ২ শতাংশের বেশি শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।

একই পথে হেঁটেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও। ৩১ আগস্ট তাদের হাতে ছিল কোম্পানির ১ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার। সেই শেয়ার ৩০ সেপ্টেম্বর দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ১৭ শতাংশে। অর্থাৎ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে বিদেশিরা। এই শেয়ারও কিনেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইর সতর্কবার্তা

কোম্পানি দুটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের একাধিকবার সতর্কবার্তা দিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ। তারা কোম্পানির কাছে শেয়ারে দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো সংবেদনশীল তথ্য আছে কি না জানতে চেয়েছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রতিবারই বলেছে দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো সংবেদনশীল তথ্য তাদের কাছে নেই। কিন্তু তারপরও শেয়ারের দাম বাড়ছে। আর এই সুযোগে বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই দুই কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি হচ্ছে। এটা খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিৎ দ্রুত লেনদেন স্থগিত করা, এরপর তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

তিনি বলেন, অস্বাভাবিক হারে দাম বাড়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছে। এখন বিনিয়োগকারীদের বুঝেশুনে শেয়ার কেনা উচিত।

এমআই/ এসএম