• ৩১ শতাংশ শেয়ার কিনবে ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকায়
• কোম্পানির পরিশোধিত মূল্য ৪৩ কোটি ৩৪ লাখ
• বর্তমান মূল্য ১২৭ কোটি ৮৮ লাখ 

দীর্ঘ দিন ধরে উৎপাদন বন্ধ ও অস্তিত্বহীন কোম্পানি বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস লিমিটেডের মালিকানায় আসছেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, তার ভাই আমিনুল হক শামীম এবং ভাতিজা সামিউল হক সাফা। ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকায় কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কিনে মালিকানায় আসছেন তারা। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মালিকানায় আসা তিন ব্যক্তির মধ্যে মেয়র ইকরামুল হক টিটু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের পরিচালক। তার ভাই শামীম হলেন রয়েল টিউলিপের এমডি আর সামিউল হক সাফা এমডির ছেলে।

বিএসইসির তথ্য মতে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে গত সপ্তাহের কমিশন সভায় বিডি ওয়েল্ডিংয়ের মালিকানায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব অনুমোদন করে।

একই সাথে বিডি ওয়েল্ডিংয়ের এমডির শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন দেওয়া হয়। শেয়ার কিনে কোম্পানির পর্ষদে আসার পর পরিচালকরা কোম্পানিকে উৎপাদনে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করবেন। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের কোম্পানির শেয়ার সোমবার ৩০ জানুয়ারি সর্বশেষ বিক্রি হয়েছে ২৯ টাকা ৩০ পয়সা। ৪৩ কোটি ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির বর্তমান মূল্য ১২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৪ হাজার টাকা।

বিএসইসির তথ্য মতে, ১৯৯৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিডি ওয়েল্ডিয়ের বর্তমান শেয়ার সংখ্যা ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩০৫টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার সংখ্যা ৩১ দশমিক ১ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংখ্যা ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংখ্যা দশমিক ৭২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংখ্যা ৬৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

তার মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে থাকা ৩১ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ার ১৭ টাকা ৫০ পয়সা এবং ১৭ টাকা দরে কিনবেন ইকরামুল হক টিটু, আমিনুল হক শামীম এবং ভাতিজা সামিউল হক সাফা।

কোম্পানির তথ্য মতে, উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ৩১ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে আইসিবির হাতে রয়েছে ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার। আর কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম নুরুল ইসলামের মালিকানায় রয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ শেয়ার।

আইসিবির ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৯টি শেয়ার কিনতে গত ২৫ জানুয়ারি আইসিবি ও সি পালের এমডি ও পরিচালকদের মধ্যে চুক্তি সাক্ষর হয়। চুক্তি অনুসারে আইসিবির ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার ইকরামুল হক টিটু ও আমিনুল হক শামীম কিনবেন ১৭ টাকা ৫০ পয়সা করে।

আর বর্তমান এমডির হাতে রয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ শেয়ার। কিন্তু ক্যান্সারের আক্রান্ত হয়ে এমডি মৃত্যুবরণ করায় এমডির শেয়ার এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ২৫ লাখ ২৫৬টি শেয়ার ১৭ টাকা দরে ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪ হাজার ৩৫২ টাকা কিনবেন আমিনুল হক, একরামুল হক এবং সামিউল হক সাফা। এরপর স্টক এক্সচেঞ্জ এমডির শেয়ার নিজেদের কাছে হস্তান্তর করবেন।

এমডির শেয়ার বিক্রির টাকা ব্রোকার হাউজের ডিপোজিটরি পার্টিসিপেটরি অ্যাকাউন্টে রাখা হবে। আদালতের অনুমতিক্রমে উত্তরাধিকারীদের কাছে অর্থ বিতরণ করে দেবে স্টক এক্সচেঞ্জ।

এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে মালিকানা পরিবর্তনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন নেই বিডি ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডের, এতে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে কমিশন অধিগ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। আশা করছি, নতুন পর্ষদ শিগগিরই কোম্পানিটির উৎপাদন শুরু করতে পারবে।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে মেয়র ইকরামুল হক টিটু এবং তার ভাই আমিনুল হক শামীমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইসিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ মুহূর্তে আইসিবির অর্থ সংকট রয়েছে। বেশির ভাগ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকা পড়ে আছে, নতুন করে বিনিয়োগযোগ্য কোনো টাকা নেই। আইসিবির ফান্ড বাড়াতে এ শেয়ার বিক্রি করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানিটি ৩০ জুন ২০১৯ সালের পর থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এমনকি গত তিন বছরের কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করেনি। ২০১৯ সালে সর্বশেষ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছিল।

৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনী কোম্পানির ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৪ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটা ছিল তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের প্রথম ওয়েল্ডিং ইলোক্টোডস ম্যানুফেচারিং কোম্পানি।

এরপর স্বাধীনতা পরবর্তীতে কোম্পানিটি বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে দখল করে নেয়। এরপর ১৯৮৪ সালে, সরকার এটি হস্তান্তর করে এবং একজন সাবেক আমলার কাছে। তিনি সর্বোচ্চ দাতা হিসেবে এটি কিনে নিয়েছিলেন।

এরপর এটি ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত একটি প্রাইভেট কোম্পানির ছিল এবং প্রায় ১২ বছর ধরে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ওরলিকনের জন্য ওয়েল্ডিং ইলেক্ট্রোড তৈরিতে নিয়োজিত ছিল, যা একটি প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং জুরিখের ওরলিকন ওয়েল্ডিং লিমিটেডের সাথে লাইসেন্সিং চুক্তির অধীনে।

১৯৯৯ সালে, কোম্পানিটি চট্টগ্রামে একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ঋণ খেলাপির কারণে কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হলে এটি সংকটে পড়ে। সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৬ সালে কোম্পানিটি চট্টগ্রামে অবস্থিত তার কারখানাটি বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলসের কাছে বিক্রি করে এবং ঢাকায় একটি নতুন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করে। যা একটি জমি কিনলেও কোম্পানি পরিচালনার জন্য একটি কারখানা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে ঢাকার জমিতে এর কোনো কারখানা নেই।

এমআই/এফকে