পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিতে আবারও লুটপাট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র আমানতকারীরা।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাজধানীর পল্টনে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিতে আমানতকারীদের পক্ষে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ঋণের ২০০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এর মধ্যে ১০০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে পরিচালক এবং চেয়ারম্যানের বেতনের পেছনে। বাকি ১০০ কোটি টাকা আমানতকারীদের ফেরত না দিয়ে নতুনভাবে ঋণ বিতরণের ফন্দি করা হচ্ছে। নতুন করে এ টাকা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই যেকোনো মূল্যে আমানতকারীদের সুদে-আসলে সব টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

তাদের অভিযোগ, সঠিকভাবে নজরদারি না করায় পিপলস লিজিংয়ের অর্থ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা লুট করে নিয়ে গেছেন। শুধু তা-ই নয়, এর পেছনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশও দেখছেন তারা। নিজেদের কষ্টার্জিত সঞ্চয়ের অর্থ দ্রুত ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছেন অবসায়ন হওয়া পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ছয় হাজার ব্যক্তি আমানতকারী।

পল্টনের প্যারামাউন্ট হাইটের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শেষে পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেন আমানতকারীরা।

মানববন্ধনে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের প্রধান সমন্বয়কারী আতিকুর রহমান আতিক বলেন, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি লাইসেন্সধারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে প্রায় ৬০০০ (ছয় হাজার) আমানতকারী সহজ-সরল বিশ্বাসে সঞ্চিত ও কষ্টার্জিত অর্থ আমানত হিসেবে জমা রেখেছিলাম। কিন্তু বিগত প্রায় পাঁচ বছর ধরে আমরা আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পাচ্ছি না। ফলে আমরা চরম অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছি।

মানববন্ধনে সামিয়া বিনতে মাহবুব বলেন, আমাদের নিরীহ আমানতকারীদের পিপলস লিজিং কোম্পানিতে আমানতের অর্থ দুর্নীতিবাজ, লুটেরা পি কে হালদার গং বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সামনেই লুট করে নিয়ে যায়। অন্যদিকে, আমাদের আমানতকারীরা আর তাদের লক্ষাধিক পরিবারের সদস্যরা এক অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। এই টাকা থেকে অনেক অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের সংসারের ব্যয় নির্বাহ হতো, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া চলত, চিকিৎসা ব্যয় হতো। আজ সব বন্ধ।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন আমানতকারী টাকা ফেরত পাওয়ার অনিশ্চয়তার কারণে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন, ক্যান্সার আক্রান্তসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত অনেক আমানতকারী অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছেন না। নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে যখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছি, তখন আমরা ব্যক্তি আমানতকারী, ফার্ম ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মালিক/পরিচালকসহ সবাই মিলে আন্দোলন, সংগ্রাম করেছি আমাদের আমানতের অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য। মহামান্য হাইকোর্টে বিচারপ্রার্থী হয়েছি। হাইকোর্ট ২০২১ সালের জুলাই মাসে ব্যক্তি আমানতকারী, ফার্ম ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মালিক-পরিচালকসহ সবার আবেদনে পিএলএফএস কোম্পানিকে রিকনস্ট্রাকশন করার জন্য আদেশ দিয়েছেন এবং কোম্পানির বোর্ড গঠন করে দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও পিএলএফএস কোম্পানির পক্ষ থেকে এখনো আমানতকারীরা তাদের আমানতের অর্থ ফেরত পায়নি। যার ফলে আমরা আবারও আমাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য আপনার ও বোর্ডের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

লিখিত বক্তব্যে আতিকুর রহমান আতিক বলেন, আমানতকারীদের মূল অর্থ আগামী এক বছরের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। তিনি বলেন, দ্রুত দাবিগুলো না মানা হলে রমজানে আন্দোলন করা হবে।

তাদের অন্য দাবিগুলো হচ্ছে— আমানতকারীদের টার্ম ডিপোজিট রিসিপ্ট (টিডিআর) নবায়ন করে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টিডিআরের বিপরীতে প্রফিট প্রদান করা।

ব্যক্তি আমানতকারী, ফার্ম ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানসহ ক্ষুদ্র আমানতকারীদের স্বার্থ সবার আগে দেখতে হবে। আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী যেকোনো কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা বোর্ডের পরিচালকদের কাছে চূড়ান্তভাবে অনুরোধ করছি।

হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী পিএলসি-এ ডিপোজিটরদের আমানতের অর্থ দ্রুত ফেরত প্রদানের জন্য বোর্ড কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ফান্ড ইনজেক্ট করার ব্যবস্থা দ্রুত করতে হবে। অথবা আদালতের আদেশ অনুযায়ী আমানতকারীদের অর্থ দ্রুত ফেরত প্রদানের জন্য পিএলএফএস-কে অন্য কোনো সলভেন্ট ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনের সঙ্গে মার্জিনের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত প্রদান করতে হবে।

যেহেতু পিএলএফসি কোম্পানি লিকিইডিয়েশন হয়নি, বরং আদালত কর্তৃক রিকনস্ট্রাকশন পর্যায়ে আছে। তাই আমাদের দাবি ব্যাংক, বিমা, ইন্স্যুরেন্স, সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পিএলএফসির-এ যে ইনভেস্টমেন্ট আছে তা শেয়ারে কনভার্ট করে কোম্পানির ইক্যুইটিতে রূপান্তর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন এবং ব্যক্তি আমানতকারী, ফার্ম, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানসহ ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আমানতের অর্থ আমানতকারীদের জীবন-জীবিকার স্বার্থে দ্রুত ফেরত প্রদান করুন।

আমরা ব্যক্তি আমানতকারী, ক্ষুদ্র আমানতকারী তথা ফার্ম ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা কীভাবে কখন আমাদের আমানতের অর্থ দ্রুত ফেরত পাব তার একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আমানতকারী কাউন্সিলকে প্রদান করতে হবে।

ডিফল্টারদের কাছ থেকে উসুল করা টাকা প্রথমে আমানতকারীদের ফেরত দিতে হবে। তার আগে অন্য কোনো জায়গায় ইনভেস্ট করা যাবে না। এটা আমাদের আমানত। এটা আমাদের প্রাপ্য।

কোম্পানির নাম চে করে অথবা নিজ নামে কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে দ্রুত প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমানতকারী কাউন্সিল ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে পিএলএফএস চেয়ারম্যান বোর্ডের প্রতি মাসে দুই মাসে একবার করে মিটিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজিএম-ইজিএম ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যা আমানতকারীদের স্বার্থবিরোধী হয়, এমন সিদ্ধান্ত যেন কোম্পানির বোর্ড গ্রহণ না করেন।

এমআই/এসএসএইচ/