বর্তমান পুঁজিবাজারে আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রয়োজন। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। তিনি বলেন, আমরা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করব।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) নির্বাহী কমিটির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে ডিএসই চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

সিএমজেএফের সভাপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী, সাবেক সভাপতি হাসান ইমাম রুবেলসহ সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা।

ডিএসইর পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন– ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুর রহমান মজুমদার, সিনিয়র মহাব্যবস্থাপক ও কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আসাদুর রহমান এবং ডিএসইর উপ-মহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান।

আরও পড়ুন : পুঁজিবাজারকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই : ডিএসই চেয়ারম্যান

ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করব। বিনিয়োগের পথে কোনো বাধা থাকলে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নেব। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে কী কী করণীয় আছে সে বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পরামর্শের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

তিনি বলেন, ডিএসইর আইটি সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করব, যাতে এই আইটি টিমের সক্ষমতা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বেও অনন্য হয়ে উঠে।

সিএমজেএফ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ডিএসইর সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানোর বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিরিখে পুঁজিবাজার অনেক পিছিয়ে আছে। এই গ্যাপ পূরণ করে বাজারের প্রকৃত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রয়োজন ইনোভেটিভ ও ডাইনামিক উপায়ে কাজ করা। গতানুগতিক ধারা ও গতিতে কাজ করে এটি সম্ভব নয়।

তিনি ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তি বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে আনা গেলে তাদের হাত ধরে নতুন নতুন অসংখ্য বিনিয়োগকারীও আসবে। তাতে বাজারের গভীরতা বাড়বে।

সিএমজেএফের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম রুবেল বলেন, দেশের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে পুঁজিবাজারে ডিএসইর যে ভূমিকা রাখার কথা, গত কয়েক বছর ধরে তারা তা পারছে না বলে মনে হয়। ডিএসইর বড় ভবন হয়েছে কিন্তু সে অনুপাতে মর্যাদা ও সক্ষমতা বাড়েনি। এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলী সাংবাদিকতা ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এ সংগঠনের নানা ভূমিকা তুলে ধরেন।

সমাপনী বক্তব্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে আতঙ্কে না থাকে, সংবাদ পরিবেশনে সেদিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানান ডিএসই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ডিএসইর আইটি খাতকে আমরা বিশ্বে নম্বর ওয়ান আইটি সেক্টরে পরিণত করবে। আমাদের বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিজিটালাইজড পুঁজিবাজার প্রয়োজন। সেটা আমরা নিশ্চিত করব।

বর্তমান বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রয়োজন উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, আমরা আরও বেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আমাদের পুঁজিবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা যুক্ত করার চেষ্টা করব। অনেক বড় বড় বিনিয়োগকারী যারা এখনো বাজারকে পর্যবেক্ষণ করছে, তাদের কাছে আমরা যাব, তাদের আমরা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। তাদের পুঁজিবাজারে আসতে কি কি সহযোগিতা দরকার তা আমরা করব।

আমাদের এখানে যারা নতুন পরিচালক আছেন, তারা একেক জন একেক খাতে অভিজ্ঞ। তাদের সহযোগিতায় আমরা পুঁজিবাজারকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। ভবিষ্যতে আরও বড় কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এই নতুন বোর্ড এগিয়ে যাব বলে প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।

ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু্ বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমরা যারা নতুন বোর্ডে এসেছি, তারা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে পুঁজিবাজারকে একটি সুন্দর অবস্থানে নিতে চাই। বিনিয়োকারীদের মধ্যে যেন কোনো হতাশা না থাকে। তাদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করব। আমরা এখন পর্যবেক্ষণ করছি।

বিশ্বের সব দেশের পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন রয়েছে উল্লেখ করে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এর আগেও কয়েকবার আমাদের পুঁজিবাজারে উত্থান-পতন হয়েছে, কিন্তু আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাতে আমাদের বিনিয়োগকারীরা যেন আতঙ্কিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যে দেশ বিভিন্ন সময় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমরা নতুন বোর্ড বিশ্বাস করি পুঁজিবাজার আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।

তিনি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থান খারাপ না। কারণ, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যে অবস্থানে রয়েছে সে তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। তাই পুঁজিবাজারকে ভালো করতে হলে আমাদের আরও কিছু কাজ করতে হবে।

এমআই/এসএসএইচ/