কোনো কাজ ছাড়াই প্রতি মাসে প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মো. জিয়াউল করিমকে ৮ লাখ টাকা করে বেতন দিচ্ছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে সিটিওকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় ডিএসই। তারপর থেকে গত ৫ মাস ধরে কোনো কাজ ছাড়াই বসিয়ে বসিয়ে বেতন এবং গাড়ি ভাড়া বাবদ ৮ লাখের বেশি টাকা প্রতি মাসে দিচ্ছে ডিএসই। ৮ লাখের মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ টাকা নিচ্ছেন বেতন বাবদ। আর গাড়ির জন্য প্রায় ৩০ হাজার এবং ড্রাইভারের বেতন দেওয়া হচ্ছে আরও প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

সব মিলে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মোট ৫ মাসে জিয়াউল করিমের পেছনে ৪০ লাখের বেশি অর্থ খরচ করেছে ডিএসই। কিন্তু তার বিষয়ে কোনো সুরাহায় যাচ্ছে না ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম সাইফুর রহমান মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএসইসির নির্দেশে সিটিওকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল। তাকে চাকরিচ্যুত করতে কোনো নির্দেশনা দেয়নি কমিশন। কমিশন যদি চাকরিচ্যুত করতে নির্দেশ দেয় তবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এদিকে ঘটনা খতিয়ে দেখতে ওই সময় একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদনও দাখিল করেছে কমিটি। কিন্তু প্রতিবেদনে কমিটি কী সুপারিশ করেছে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন ডিএসইর কোনো কর্মকর্তা।  

জিয়াউল করিমকে চাকরিচ্যুত কিংবা পুনরায় কাজে ফেরানোর বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানতে কমিশনে কোনো চিঠি দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি কিন্তু ডিএসই ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং বসিয়ে বসিয়ে তাকে বেতন দেওয়া হচ্ছে। 

তিনি বলেন, বিএসইসির চিঠিতে তদন্তকালীন সময়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি কিংবা চাকরিতে যোগদানে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর তো সিদ্ধান্ত নিতে নিষেধ করা হয়নি। বসিয়ে না রেখে তার বিষয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল ডিএসইর।

জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিএসইর কোনো কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে ডিএসইর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এখানে বিএসইসির নাম জড়ানোটা দুঃখজনক।  

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ অক্টোবর কারিগরি ত্রুটির কারণে ডিএসইতে লেনদেন বিঘ্নের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে ৩১ অক্টোবর ডিএসইর সিটিওকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একই সঙ্গে ঘটনা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ডিএসইর সিটিওকে ছুটিতে থাকতে বলা হয়েছিল। এরপর ১ নভেম্বর থেকে তাকে ছুটিতে পাঠায় ডিএসইর ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

এমআই/এসকেডি