মনে করেন, কোথাও আপনি ৫০ লাখ টাকা গচ্ছিত রাখলেন। ঠিক চারমাস পর যদি সেই অর্থ প্রায় চারগুণ বেড়ে ২ কোটি টাকা হয়ে যায়, তখন এটিকে রূপকথার সেই ‘আলাদিনের চেরাগ’ পাওয়ার সঙ্গে তুলনা করলে কি ভুল কিছু হবে? নিশ্চয়ই রাতারাতি এমন ধনী হওয়ার গল্পকে ‘আলাদিনের চেরাগ’ পাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্সের অনেক বিনিয়োগকারীর ভাগ্যে গত চারমাসে এই চেরাগের দেখা মিলেছে।

কোম্পানিটির শেয়ারদর টানা চারমাস ধরে রকেট গতিতে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এতে কোনো কোনো বিনয়োগকারীর রাতারাতি ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ হয়েছে। এখনো প্রতিদিন বাড়ছে শেয়ারদর। স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হলেও থামছে না দৌড়।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১৫ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রগতি লাইফের শেয়ারদর ছিল ৭৯ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর থেকে টানা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে শেয়ারটির দর। প্রতিদিন একটু একটু বেড়ে আজকে দিন পর্যন্ত এটি ২৬৬ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত উঠেছে। আলোচিত এই চারমাসে শেয়ারটির দর প্রায় ৪ গুণ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কোনো কোনো বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগের দুই-তিনগুণ বেশি মুনাফাও তুলে নিয়েছেন।

এদিকে, গত দুই মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি কারণ জানতে চেয়ে দুই দফায় চিঠি দেয় ডিএসই। প্রতিবারই কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের কাছে এমন কোন অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) নেই, যাকে কেন্দ্র করে কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে পারে। ডিএসইর ওয়েবসাইটে এই সতর্কবার্তাও প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে ঝুঁকি বিবেচনায় নিতে পারে। অর্থাৎ এত উচ্চ দরে শেয়ারটি কেনা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তা সত্ত্বেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে কোম্পানির শেয়ারদর প্রতিদিন বাড়ছে।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২৫ হিসাব বছরের ৩০ জুন শেষে প্রগতি লাইফের জীবন বিমা তহবিলের আকার দাঁড়িয়েছে ৬৯৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬৩৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে কোম্পানির জীবন বিমা তহবিলের আকার বেড়েছে ৬২ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২৪ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কোম্পানিটি। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২৩ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ১৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে প্রগতি লাইফ। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২২ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ।

২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রগতি লাইফের অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৩২ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ২৫ লাখ ৪৫ হাজার ২৮৮। এর ৪০ দশমিক ৬২ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২১ দশমিক ৩৫ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৩৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
 
এমএমএইচ/এসএম