দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) রেনাটা পিএলসির প্রেফারেন্স বা অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে। 

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় এটিবিতে লেনদেন তালিকায় নাম লিখিয়েছে কোম্পানিটির প্রেফারেন্স শেয়ার। এর মাধ্যমে ডিএসইর এই লেনদেন প্ল্যাটফর্মে দুটি সিকিউরিটিজ তালিকাভূক্ত হলো।

তবে, লেনদেন তালিকায় নাম লেখালেও প্রথম অর্ধঘন্টায় রেনাটার প্রেফারেন্স শেয়ারে কোনো লেনদেন হয়নি। লেনদেন শুরুর জন্য শেয়ারটির অভিহিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৯০০ টাকা। 

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন সাপেক্ষে রেনাটা পিএলসি সম্প্রতি ৩২৫ কোটি টাকার প্রেফারেন্স বা অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ইস্যু করেছে। এই প্রেফারেন্স শেয়ারের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করবে কোম্পানিটি।

তথ্যানুসারে, রেনাটার ইস্যু করা ৩২৫ কোটি টাকার প্রেফারেন্স শেয়ারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি নন-কিউমুলেটিভ, মানে কোনো বছর লভ্যাংশ না পেলে সেটি ভবিষ্যতে জমা হবে না এবং নন-পার্টিসিপেটিভ, মানে কোম্পানির মুনাফার ওপর ভিত্তি করে প্রেফারেন্স শেয়ারধারীরা বার্ষিক ১৫ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন। এ প্রেফারেন্স শেয়ারের মেয়াদ ছয় বছর এবং তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ বছর পর্যন্ত বার্ষিক ২৫ শতাংশ হারে প্রেফারেন্স শেয়ার থেকে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। একসময় এ প্রেফারেন্স শেয়ার পুরোপুরি সাধারণ শেয়ারে রূপান্তর হবে। এক্ষেত্রে রূপান্তর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭৫ টাকা।

এ বছরের জুলাইয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছ থেকে প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন পায় রেনাটা। এরপর গত ২০ সেপ্টেম্বর বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) এ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয় কোম্পানিটি।

পুঁজিবাজারের সার্বিক বিস্তার তথা বাজার পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্য সামনে রেখেই চালু করা হয়েছিল এটিবি। উদ্দেশ্য ছিল– পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোর জন্য সহজ ও কম খরচে মালিকানা হস্তান্তরের একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা। এই প্ল্যাটফর্মকে জনপ্রিয় করার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের মূল মার্কেটে ভালো কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আসা। পুঁজিবাজারের বাইরে অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন কারণে তালিকাভুক্ত হতে অনাগ্রহ দেখায়। কিছু কিছু কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়াকে প্রক্রিয়াগত ঝামেলার বিষয় মনে করে। ওই সব কোম্পানি এটিবিতে তালিকাভুক্ত হতে চাইলে রাইট শেয়ার কিংবা প্রাইভেট প্লেসমেন্টে শেয়ার ছেড়েও তাদের মূলধন বাড়াতে পারবে।

তবে, দুঃখজনক হলেও দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের এটিবি প্ল্যাটফর্মে এটি নিয়ে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪টি সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্ত হলো। ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি ব্রোকারেজ হাউজ লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের মাধ্যমে ডিএসইতে যাত্রা শুরু হয়েছিল এটিবি বোর্ডের। তখন প্রাণ এগ্রো লিমিটেড আনসিকিউরড গ্যারান্টেড বন্ড (পিএএলইউজিবি ওয়ান) ডেট সিকিউরিটিজ হিসেবে এই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে, পরবর্তী সময়ে ওই বন্ডের উদ্যোক্তা কর্তৃপক্ষ বন্ডটিকে এটিবিতে তালিকাভুক্ত করতে অনাগ্রহ দেখায়। অন্য স্টক এক্সচেঞ্জ সিএসইতে আইএফআইসি ব্যাংকের দুটি বন্ড তালিকাভুক্ত রয়েছে। অর্থাৎ দুই স্টক এক্সচেঞ্জে মাত্র পচারটি সিকিউরিটিজ তালিকাভুক্ত হলো।

এটিবি যাদের জন্য সুযোগ ও সম্ভাবনাময়

যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত বিভিন্ন ধরনের সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার ৫১৬টি। এর মধ্যে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ৩ হাজার ৭৭৭টি। যার মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে তালিভুক্ত রয়েছে মাত্র ৩৬০টি। বাকি ৩ হাজার ৪১৭টি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, এই কোম্পানিগুলো চাইলে তাদের শেয়ার মালিকানা এটিবিতে তালিকাভুক্ত হয়ে লেনদেন করতে পারবে। তবে, যেসব কোম্পানি পাবলিক লিমিটেড হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি, সেগুলো এই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করতে পারবে না। এখানে তালিকাভুক্ত হতে অবশ্যই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে।

এর বাইরে ওটিসি প্ল্যাটফর্মের আরও ৫৬টি কোম্পানি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনো কোম্পানি উৎপাদনে থাকলে এবং ব্যবসায় ভালো করতে সক্ষম হলে সেগুলোরও এই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। ডেবট সিকিউরিটিজের মধ্যে প্রেফারেন্স শেয়ার, কর্পোরেট বন্ড, ট্রেজারি বন্ড এবং ডিভেঞ্জারগুলোর এই বোর্ডে তালিকাভুক্ত হয়ে মালিকানা হস্তান্তরের সুযোগ রয়েছে। 

এ ছাড়া যেসব মিউচুয়াল ফান্ড (বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, সেগুলোও এই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করতে পারবে। পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন– ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর জন্যও মালিকানা হস্তান্তরের সুযোগ রয়েছে এই প্ল্যাটফর্মে।

এমএমএইচ/এমএসএ