বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাওয়া বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের শেয়ার বরাদ্দে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, কোটা পদ্ধতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আইপিওর ১৫ লাখ শেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ৫৪টি শেয়ার। যদিও কোম্পানির ঘোষিত প্রসপেক্টাসে ৫৮টি শেয়ার পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের যে শেয়ার বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল তার থেকে বেশি দেওয়া হয়েছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৬টি শেয়ার কম দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়া শেয়ার এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রবাসী বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবধারীদের মধ্যে বিতরণও করা হয়ে গেছে।

আইপিওর অনুমোদনের সম্মতিপত্রে (কনসেন্ট লেটার) মোট ৭ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ৪৮৮টি শেয়ার ইস্যু করবে বলে উল্লেখ করে বারাকা পতেঙ্গা। এর মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৮৮টি শেয়ার। আইপিওর বাকি ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০০টি শেয়ারের মধ্যে প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার এবং ক্ষতিগ্রস্তসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ২ কোটি ৯৫ লাখ ৮ হাজার ২০০টি শেয়ার বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়। যা ডিএসইর ইএসএস ওয়েবসাইটে এবং কোম্পানির প্রসপেক্টাসেও প্রকাশ করা হয়।

সেই নিয়ম অনুসারে, আইপিওর ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ২০০টি শেয়ারের মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৫৬০টি শেয়ার। কিন্তু ডিএসইর গাফিলতির কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটায় শেয়ার বরাদ্দ কমিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রবাসীদের মধ্যে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৬টি শেয়ার কম দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পৌনে ১৫ লাখ শেয়ার প্রবাসী ও ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হয়েছে।

প্রায় ১৫ লাখ শেয়ারের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪০৮টি এবং প্রবাসী কোটায় ৪৮টি শেয়ার বেশি দেওয়া হয়েছে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৫৮টির পরিবর্তে ৫৪টি করে শেয়ার পেয়েছেন। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা ৭৭টির জায়গায় পেয়েছেন ৯৭টি করে। অর্থাৎ ২০টি করে বেশি পেয়েছেন।

জানতে চাইলে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল লতিফ পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত সপ্তাহে বারাকা পতেঙ্গার আইপিওর শেয়ার বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দকৃত শেয়ারের কোনো ধরনের ভুল হয়েছে কি না দেখতে ডিএসইর সিওওসহ (প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার) একটি টিম কাজ করছে। কোনো সমস্যা থাকলে সংশোধন করা হবে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি, আমরা খতিয়ে দেখব। শেয়ার বরাদ্দে কোনো রকম গাফিলতি হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের শেয়ার বরাদ্দের অনুষ্ঠান গত ৫ জুলাই ডিএসইর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঘোষণা করা হয়, কোম্পানিটির আইপিওতে আবেদনকারী সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রতি ১০ হাজার বিপরীতে ৫৪টি করে এবং প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা প্রতি ১০ হাজার টাকার বিপরীতে ১২৮টি করে শেয়ার বরাদ্দ পেয়েছেন।

গত ১৩ থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির আইপিওতে আবেদন গ্রহণ করা হয়। এর আগে কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে ২২ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিডিং (নিলাম) অনুষ্ঠিত হয়। বিডিংয়ে কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ করা হয় ৩২ টাকা।

এমআই/এসকেডি