কাল দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হবে। এবারের ঈদ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটু আলাদা। কেননা ‘মহাধসের’ পর এবারই প্রথম তারা আনন্দের সঙ্গে এ উৎসব পালন করবেন।

বাজারে ‘মহাধসের’ পর গত ১০ বছরে হারানো পুঁজির সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা এরইমধ্যে ফিরে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর বেশিরভাগই এসেছে গত তিন মাসে (এপ্রিল, মে ও জুন)। পুঁজিবাজারে নতুন অর্থবছরের প্রথম ১৫ দিন কেটেছে সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার এ সময়ে এসে হারানো পুঁজি ফিরে পাওয়াটা বিনিয়োগকারীদের জন্য আশীর্বাদ। পুঁজি ফিরে পাওয়ায় ২৩ লাখ বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি বাজার সংশ্লিষ্ট এক কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও চাঙ্গা হয়েছে। 

২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বরের পর দেশের পুঁজিবাজারে ধস নামে। যা চলে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত। এ ‘মহাধসে’ ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন। ক্ষতি কাটাতে গত ১০ বছর ধরে চেষ্টা করছেন বিনিয়োগকারীরা। 

গত বছর থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। সর্বশেষ তিন মাসের উত্থানে দেশের পুঁজিবাজার এখন নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে। ডিএসইর বাজার মূলধন এখন সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকার ঘরে অবস্থান করছে।

ইউসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের বিনিয়োগকারী মোমতাজ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঈদের আগে আমার তিন লাখ টাকা লাভ হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছি। কিছু টাকায় ঈদের কেনাকাটাও করেছি। পরিবার পরিজনকে নিয়ে এই প্রথম একটু ভালো ভাবে ঈদ করব বলে আশা করছি। খুবই ভালো লাগছে। গত রমজানের ঈদেও দুই লাখ টাকা লাভ হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। 

আইপিডিসির বিনিয়োগকারী শেখ নাঈদ হাসান বলেন, আমি জুতার ব্যবসা করি। কিন্তু লকডাউনের কারণে দোকান খুলতে পারছি না। বেকার সময় পার করছিলাম। আমার এক বন্ধুর পরামর্শে হাতে থাকা পাঁচ লাখ টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছিলাম। তা থেকেই গত এক মাসে এক লাখ ২০ হাজার টাকা লাভ পেয়েছি। করোনার সময়ে লাভের টাকা পেয়ে অনেক উপকার হয়েছে। ঈদটা ভালোভাবে করতে পারব।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট শরীফ আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনায় যখন দেশের প্রায় সব ব্যবসায় লোকসান, সে সময়ে পুঁজিবাজার ভালো রয়েছে। শেয়ার ব্যবসায়ীদের ভালো মুনাফা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন ব্রোকার হাউজের মালিক ও কর্মকর্তারা। মালিকরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও বোনাস দিতে পেরেছেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় গত এক বছরে ডিএসইর প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) দুই হাজার ৩৩৫ পয়েন্ট বেড়ে ছয় হাজার ৪০৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচকের সঙ্গে বেড়েছে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম। তাতে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। 

ডিএসই বলছে, গত বছরের ২০ জুলাই ৩৪৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছিল। ঈদের আগে শেষ কার্যদিবস অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২৬৪ কোটি টাকা।

গত বছরের ২০ জুলাই ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ১৬ হাজার ২৫৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেখান থেকে দুই লাখ ১৮ হাজার ৯৩১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা বেড়ে গত বৃহস্পতিবার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৫ কোটি ২৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

সেন্ট্রাল ফর ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে ২৩ লাখ নয় হাজার ৩৪৬টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিওধারী) হিসাব রয়েছে।

এমআই/আরএইচ