• গুজব ছড়ানো হচ্ছে মালিকানা কিনেছে এস আলম গ্রুপ
• বাড়ছে শেয়ারের দাম, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী
• এ ধরনের ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক : আবু আহমেদ

বছরের পর বছর ধরে উৎপাদনহীন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেড। কোম্পানির মালিকরাও শেয়ার বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।  

সম্প্রতি এ কোম্পানি নিয়ে পুঁজিবাজারে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজব ছড়ানো হচ্ছে- শেয়ার কিনে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় আসছে এস আলম গ্রুপ, দ্রুত উৎপাদন শুরু হবে। শেয়ারের দাম ২০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।  

চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই গুজব ছড়ানোর কারণে কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। যারা এই গুজবে বিশ্বাস করে শেয়ার কিনছেন তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

দ্রুত এই প্রতারক চক্রটিকে চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। শুধু সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল নয়, বেশ কিছু কোম্পানির নামে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে কারসাজি চক্র। এই কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বাজারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারাবেন। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বাজার ও বিনিয়োকারীদের স্বার্থে  বিচারের আওতায় আনতে হবে বলেও জানান তিনি।

দেখা গেছে, ফেসবুকে ‘শেয়ারবাজার ২০২১’ নামে একটি গ্রুপে ইমরান খান রতন নামে একজন শনিবার একটি পোস্ট করেন যে, ‘এস আলম গ্রুপ  সিএনএ টেক্স(cna tex)কিনে নিয়েছে। খুব শিগগিরই উৎপাদন শুরু হবে। শেয়ারের দাম ২০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।’ পোস্টটি আইপিও ইনভেস্টরস, বাংলাদেশ শেয়ার বাজার বিনিয়োগকারী পরিষদ এবং বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জোটেও ছড়ানো হয়। 

এ গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর রোববার কোম্পানিটির ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। প্রথম তিন ঘণ্টায় শেয়ারের দাম বাড়ে ২০ পয়সা করে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কোম্পানির শেয়ার দর খুব অল্প সময়ে ১৯৫ শতাংশ বেড়েছে।

ডিএসইর তথ্য অনুসারে, ২৩৯ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানিটি ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। তিন বছরের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকরা বেশি দামে শেয়ার বিক্রি করে চলে যান। এরপর প্রথমে কোম্পানিটি লোকসানে নিমজ্জিত হয়। তারপর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মৃতপ্রায় কোম্পানির শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের চেয়ে ৬ টাকা কমে চলতি বছরের ৬ জুন  কেনা-বেচা হয় ২ টাকা ৪০ পয়সায়।

সেখান থেকে গতকাল কোম্পানির শেয়ার ৭ টাকা ১০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে ৪ টাকা ৭০ পয়সা বা ১৯৫ শতাংশ। উৎপাদন বন্ধ থাকা একটি কোম্পানির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সচেতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার গতিশীল। বর্তমান বাজারে সূচক ও লেনদেন রেকর্ড গড়ছে। বাজারের এ গতিকে নষ্ট করার জন্য একটি কারসাজি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। আর তারাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর কাজটি করে যাচ্ছে। আর গুজবে কান দিয়ে যারা কোম্পানিটির শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন তাদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে লোকসান থেকে উৎপাদনে ফেরাতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে  কোম্পানিটিতে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পর্ষদের নেতৃত্ব দেওয়া হয় নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথকে। এছাড়াও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়- মোহাম্মদ শরীয়ত উল্লাহ, এবিএম শহিদুল ইসলাম, বিএম আশরাফুজ্জামান, তৌফিক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ আহসানকে।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল কোনো গ্রুপ কিনে নিচ্ছে এমন খবর কমিশনের জানা নেই। যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ এ ধরনের কাজ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের মালিকানা পরিবর্তনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। কোম্পানির পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়নি। 

এ বিষয়ে কোম্পানির সচিবসহ একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে (আইপিও) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পায় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল লিমিটেড। বিতর্কিত কোম্পানিটির আইপিওর অনুমোদন দেওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশও হয়। কিন্তু তৎকালীন কমিশন সব কিছু উপেক্ষা করে কোম্পানিটিকে ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত করার অনুমোদন দেয়।

অনুমোদনের দুই বছর পর অর্থাৎ ২০১৭ সালে লোকসানের মুখে পড়ে সিঅ্যান্ডএ। তালিকাভুক্তির পর থেকে এখন পর্যন্ত শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, কোম্পানিটির তৎকালীন এমডি-চেয়ারম্যান এবং উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তাদের সাথে প্রতারণা করেছেন। 

তালিকাভুক্তির সময় ৬০ শতাংশের বেশি শেয়ার ছিল উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে উদ্যোক্তাদের হাতে ছিল কোম্পানির ২২ শতাংশ শেয়ার। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬২ শতাংশ শেয়ার। অর্থাৎ ৪০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন উদ্যোক্তা-পরিচালকরা।

এমআই/এনএফ