আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে চালু করতে চায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। চালুর লক্ষ্যে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 

সোমবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের পর্ষদ বিএসইসিকে জানিয়েছে যে, পর্ষদ কোম্পানিটি চালু করতে চায়। আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের পাওনা কীভাবে পরিশোধ করা যায় সেজন্য কোম্পানিটি দ্রুত চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে। কোম্পানির বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিশেষ বৈঠকে এই তথ্য জানানো হয়। 

বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ সামসুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর কোম্পানির পক্ষে পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক সামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমানত ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে কোম্পানিটি চালু করার চেষ্টা করছি। পরিকল্পনা অনুসারে বর্তমান পর্ষদ ও কোম্পানির কর্তৃপক্ষ কাজ করতে পারলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি পুনরুজ্জীবিত হবে। 

ডিএসইসির তথ্য মতে, ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ার সংখ্যা ২৮ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭টি।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৮ জুন (সোমবার) পিকে হালদার কাণ্ডে আলোচনায় আসা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে পুর্নগঠন বা পুনরুজ্জীবিত করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য একটি বোর্ডও গঠন করে দিয়েছেন আদালত। তবে বোর্ডে কারা থাকছেন তা লিখিত আদেশে জানা যাবে।

২০১ জন আমানতকারীর শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

গত ২১ জানুয়ারি পিএলএফএসএল থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, এমন ২৮৬ জন ঋণ গ্রহীতাকে তলব করেন হাইকোর্ট। সাময়িক অবসায়ক আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া তালিকা দেখার পর সেদিন এ আদেশ দেন উচ্চ আদালত।

ওই দিনের আদেশে আদালত ২৮৬ জনকে দুই ভাগে হাজির হতে দিন নির্ধারণ করে দেন। তাদের মধ্যে ১২২ ঋণ খেলাপি নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হননি।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের বক্তব্য শোনেন আদালত। তাদের বক্তব্য শোনার পর তলবে হাজির না হওয়া ১২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

ওই আদেশে বলা হয়, পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

এদিকে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানকে ওই ১২২ ব্যক্তি বা সত্তার বর্তমান ঠিকানা সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে বলা হয় তাকে।

১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ। 

২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দেয় ওই কোম্পানি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারেনি তারা। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন আদালত।

এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়। 

পরে সাময়িক অবসায়ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এমআই/জেডএস