গেল অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় চাঙা পুঁজিবাজারে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে লেনদেন বেড়েছে। তাতে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে দ্বিগুণ।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার একগুচ্ছ উদ্যোগের ফলে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বাজার পজিটিভ হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে ফিরেছে। তাতে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পুঁজিবাজারে লেনদেন ২০২০-২১ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। লেনদেনের পাশাপাশি সূচক বাড়ায় একদিকে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বেড়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে সরকার এ খাত থেকে রাজস্ব আয় পেয়েছে দ্বিগুণ। যা বাজারে জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন তারা।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, চলতি বছরের ১ জুলাই ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ২১৯ পয়েন্ট। বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ায় এ সূচকটি ৪৪৮ পয়েন্ট বেড়ে গত ৩০ নভেম্বর দাঁড়ায় ৬ হাজার ৭০৩ পয়েন্টে। তাতে বিনিয়োগকারীদের বাজার মূলধন ১৯ হাজার ৯৬ কোটি ১৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৪ কোটি ৬৯ লাখ ১৫ হাজার টাকায়। ১ জুলাই ডিএসইর মূলধন ছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৮ কোটি ৫২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ২০৬ কোটি ৯ লাখ ৫৫ হাজার ৭০২ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে সরকার পুঁজিবাজার থেকে রাজস্ব পেয়েছিল ১১০ কোটি ৮০ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৫ টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব প্রায় শত কোটি টাকা বেশি পেয়েছে সরকার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ

এ উৎফুল্ল ও চাঙা পুঁজিবাজার থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ২০৬ কোটি ৯ লাখ ৫৫ হাজার ৭০২ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে সরকার পুঁজিবাজার থেকে রাজস্ব পেয়েছিল ১১০ কোটি ৮০ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯৫ টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব প্রায় শত কোটি টাকা বেশি পেয়েছে সরকার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।

ডিএসইর তথ্য মতে, আয়কর অধ্যাদেশ ৫৩-বিবিবি ও ৫৩-এম এ দুই ধারায় পুঁজিবাজার থেকে সরকার রাজস্ব পায়। এর মধ্যে ৫৩ বিবিবি ধারায় আয়করের আওতায় আসে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লেনদেন। এ লেনদেন থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৮২ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার ১৪৬ টাকা। এর মধ্যে শুধু নভেম্বর মাসেই আয় হয়েছে ২৬ কোটি ৬৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮৭ টাকা। অথচ ২০২০-২১ পুরো অর্থবছরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল ১৮০ কোটি ১৬ লাখ ১০ হাজার ৬৯১ টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে গত বছরের চেয়ে ২ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব পেয়েছে সরকার।

আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি থেকে সরকার রাজস্ব হয়েছিল ৮১ কোটি ৩১ লাখ ৬৯ হাজার ১৮৩ টাকা।

শুধু তাই নয়, পুঁজিবাজারে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় গত অর্থবছরের পাঁচ মাসে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি বেশি ছিল। ফলে সরকার এ খাত থেকে রাজস্ব আগের অর্থবছরের তুলনায় কম পেয়েছে। কিন্তু উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির হার কমা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল-আমীন।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকরাই যদি কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দেন তাহলে এসব কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের নানা শঙ্কা তৈরি হয়। তারা মালিকানায় থাকছে, তার মানে কোম্পানি ভালো পারফর্ম করবে। এতে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির প্রতি আস্থা বাড়বে।

ডিএসইর তথ্য মতে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল ২৯ কোটি ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ৫১২ টাকা। ২০২১ সালের একই সময়ে রাজস্ব আয় হয়েছে ২৩ কোটি ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫৫৬ টাকা। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় ৬ কোটি ২২ লাখ ৯৪ হাজার ৯৫৮ টাকা রাজস্ব আয় কমেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক সভাপতি শাকিল রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনা প্রভাব কাটিয়ে পুঁজিবাজার চাঙা রয়েছে। লেনদেন বেড়েছে। লেনদেন বাড়ায় শেয়ার কেনা-বেচা থেকে সরকারের কর বাবদ রাজস্ব আয় বেড়েছে।

তিনি বলেন, লেনদেন বাড়ায় একদিকে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ফিরতে শুরু করেছে চাঞ্চল্যতা। অপরদিকে সরকারের আয় বেড়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিএসইসি) নতুন নেতৃত্বের ফলে।

ডিএসইর পরিচালক বলেন, পুঁজিবাজার যত ভালো থাকবে লেনদেন তত বাড়বে। সরকার এ খাত থেকে তত বেশি রাজস্ব পাবে। সরকারের উচিত পুঁজিবাজার ভালো রাখা।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কমিশন পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে। এ কারণেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা ফিরছেন। বাজারের আকার বাড়ছে, নতুন নতুন কোম্পানি আসছে, বিনিয়োগকারীও বাড়ছে। এ কারণে লেনদেন বাড়ছে। আর লেনদেন বাড়ার কারণে সরকার এ খাত থেকে রাজস্ব বেশি পাচ্ছে।

তিনি বলেন, লেনদেন বাড়াতে নতুন বন্ডের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক্সপোজার লিমিটে কেনা দামে রাখার বিষয়ে কাজ করছে বিএসইসি।

২০২০ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন পুরোদমে কাজ করছে। এরই মধ্যে কিছু প্রতিফলও দেখা যাচ্ছে। কমিশন প্রথমে হতাশাগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা আনার চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয়ত তারল্য সংকট দূর করার চেষ্টা করছে।

বাজারের স্বার্থে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানিগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন করা হচ্ছে। যেসব কোম্পানির পরিচালকদের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার নেই তাদের পরিচালক পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার যেসব কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকের যৌথভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার নেই সেগুলোতে নতুন পর্ষদ গঠন করছে কমিশন। তাছাড়া বাজারে ভালো ভালো কোম্পানির আইপিও আনার চেষ্টাও করছে।

লেনদেন বাড়ানোর জন্য এরই মধ্যে নতুন নতুন ফান্ড ক্রিয়েট করেছে কমিশন। ফান্ডগুলো আসতেও শুরু করেছে। ফলে ২০১০ সালের মহাধসের পর পুঁজিবাজারে সর্বোচ্চ লেনদেনও হচ্ছে। এ অবস্থা ধরে রাখতে পারলে আগামীতে সরকার এ খাত থেকে আরও বেশি রাজস্ব পাবে বলে বিএসইসির প্রত্যাশা।

এমআই/এসএসএইচ