সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ২০২২ সালে ভর্তি করা ৬ষ্ঠ শ্রেণি এবং ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির উপবৃত্তিযোগ্য শিক্ষার্থী নির্বাচনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই, তালিকা প্রণয়ন ও তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের তথ্য এইচএসপি এমআইএস সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ মার্চ শুরু হয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রম চলবে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত।

বিষয়টি জানিয়ে সব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সোমবার (৭ মার্চ) চিঠিটি প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। 

জানা গেছে, দারিদ্র্য ও প্রক্সি মিন্স টেস্টিং যৌথ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই এবং একটি বিশেষায়িত সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। শুধুমাত্র ষষ্ঠ এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির আওতায় উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা উপবৃত্তি কর্মসূচির বাইরে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নতুন ভর্তি হয়েছে, তারা উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে না। শিক্ষার্থী অন্য কোনো সরকারি উৎস থেকে উপবৃত্তি অথবা অভিভাবক কর্তৃক শিক্ষাভাতা গ্রহণ করলে উপবৃত্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। এছাড়াও শিক্ষা বোর্ড থেকে মেধা বা সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী উপবৃত্তি প্রাপ্তির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

১০টি উপজেলার ক্ষেত্রে উপবৃত্তির সফটওয়্যারে এন্ট্রি করা সব শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হবে। এ উপজেলাগুলো হলো- বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, আলিকদম, কুড়িগ্রামের সদর, চর রাজিবপুর, চিলমারী ও উলিপুর, দিনাজপুরের কাহারোল ও খানসামা এবং কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর।

শিক্ষার্থী নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দারিদ্র্য নিরূপণের জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ব্যবহৃত প্রশ্নমালার ওপর ভিত্তি করে একটি নমুনা আবেদনপত্রে আবেদন করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক ও উপজেলা বা মেট্রোপলিটান এলাকার উপদেষ্টা কমিটি শিক্ষার্থীর আবেদনের তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাই করবে। আবেদনপত্রের তথ্য যাচাই বাছাই শেষে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এইচএসপি এমআইএসে এসব তথ্য এন্ট্রি করতে হবে। তথ্য এন্ট্রির পর প্রতিষ্ঠান থেকেই তথ্য অনলাইনে উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠাতে হবে।

উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপবৃত্তির জন্য উপজেলা বা থানায় পাঠানো সব আবেদনপত্র উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার উপদেষ্টা কমিটির বিবেচনার জন্য পেশ করবেন এবং অ্যাডভাইজারি কমিটির অনুমোদন নিয়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর তথ্য উপজেলা বা থানা থেকে এইচএসপি বা প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে পাঠাবেন।

সারাদেশের উপবৃত্তি উপকারভোগী শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট অফিসের এমআইএস সেলের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এইচএসপি ইউনিটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে। লৈঙ্গিক ভিত্তিতে নয় বরং দারিদ্র্যের ভিত্তিতে উপকারভোগী শিক্ষার্থী নির্বাচন হবে। ফলে এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কম বেশি হতে পারে। শারীরিক প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রাক্তন ছিটমহলের বাসিন্দা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের পর সরাসরি এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে এক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ দেওয়া সনদ বা প্রত্যায়ন পত্রের সত্যায়িত কপি এমআইএসে সংযুক্ত এবং সংরক্ষণ করতে হবে। সব শিক্ষার্থীর ১৭ সংখ্যার অনলাইন জন্মসনদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীর তথ্য এইচএসপি ও এমআইএসে এন্ট্রি করলেই উপবৃত্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। আবেদনকারী শিক্ষার্থী দেওয়া তথ্য এইচএসপি এমআইএসের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের কমিটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আবেদনপত্রের তথ্য যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করবেন। কমিটির সদস্যরা প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর বাড়ি পরিদর্শন করে আবেদনপত্রে দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করবেন। সত্যতা যাচাই শেষে শিক্ষার্থীদের তথ্য এইচএসপি এমআইএসে এন্ট্রি করে ‘আবেদনপত্রের সব তথ্য সঠিক আছে’ মর্মে একটি প্রত্যায়নপত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠাবেন এবং আবেদনপত্রের হার্ডকপি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংরক্ষণ করবেন। তবে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ের কমিটিতে উপকারভোগী নির্বাচনে কোনো অসত্য তথ্য দিলে বা অনিয়ম করা হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে। এ কমিটি প্রয়োজনে যেকোনো সময়ে সভায় মিলিত হতে পারবে।

জানা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বা বেতন মওকুফ থাকবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অনুকূলে স্কিম ডকুমেন্ট অনুযায়ী নির্ধারিত হারে টিউশন ফি বা বেতন দিতে হবে। উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনোক্রমেই টিউশন ফি বা বেতন আদায় করা যাবে না।

নতুন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতি পেলে তা সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। সেক্ষেত্রে এইচএসপি ও এমআইএসের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে স্কিম পরিচালক বরাবর আবেদন করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কয়েকদফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে, শিক্ষার্থীর জন্মসনদ নম্বর অবশ্যই ১৭ ডিজিটের হতে হবে। বাবা, মা বা অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (১০ অথবা ১৭ সংখ্যা) অবশ্যই এন্ট্রি করতে হবে। ১৩ সংখ্যার জাতীয় পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে প্রথমে জন্মের বছর বসিয়ে ১৭ সংখ্যায় রুপান্তর করতে হবে। শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেকোনো বৈধ বা সচল অনলাইন ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। অনলাইন বা এজেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট নম্বর ১৩ থেকে ১৭ ডিজিট এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট নম্বর ১১-১২ ডিজিট হতে হবে। শিক্ষার্থীর অভিভাবক হবেন বাবা বা মা। কেবল মাত্র বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে অন্য কোনো ব্যক্তিকে (ভাই বা বোন বা দাদা বা দাদী বা নানা বা নানী) অভিভাবক হিসেবে নির্বাচন করা যাবে। তথ্য এন্ট্রির সময় বাবাকে অভিভাবক নির্বাচিত করলে বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসাবধারীর নাম হিসাবে বাবার নাম এন্ট্রি করতে হবে। অভিভাবক হিসাবে মাকে নির্বাচিত করলে মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসাবধারীর নাম হিসাবে মায়ের নাম এন্ট্রি করতে হবে। বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে অন্য কোনো ব্যক্তিকে অভিভাবক নির্বাচিত করলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসেবধারীর নাম হিসাবে তার নাম এন্ট্রি করতে হবে। স্কুল ব্যাংকিং বা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে যার নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে হিসাবধারীর নাম হিসাবে তার নাম এন্ট্রি করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তার আওতাধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিষয়টি অবহিত করে মনিটরিং করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে সৃষ্ট যেকোনো সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন। উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউজার আইডি বা পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে বা অন্য কোনো কারণে এইচএসপি এমআইএসে লগ ইন করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ই-মেইলে (mis.hsp@pmeat.gov.bd) যোগাযোগ করতে হবে।

এএজে/জেডএস