নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের (সিপিএস) আয়োজনে মঙ্গলবার ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ : কার লাভ, কার ক্ষতি?’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।   

সেমিনারে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও বর্তমানে এনএসইউর এসআইপিজির প্রফেসরিয়াল ফেলো রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক, প্রথম আলোর কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজ, এনএসইউর রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ও  সহকারী অধ্যাপক ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা। 

এসআইপিজি ও সিপিএসের পরিচালক এবং এনএসইউর রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তৌফিক এম. হক এ সেমিনার সঞ্চালনা করেন।

অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান যুদ্ধের ইতিহাস, ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি রাশিয়ার আগ্রাসনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার ফল হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি আরও বলেন, এ অসম যুদ্ধে ইউক্রেন বিশ্ব রাজনীতিতে নিছক একটি খেলার পাত্রে পরিণত হয়েছে।     

অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দিন এ যুদ্ধের আইনি ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের নামে মানুষ হত্যা কখনই কাম্য নয়। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে  অ-ইউরোপীয় শরণার্থীরা যে বর্ণবাদের মুখোমুখি হচ্ছে সেটি বন্ধ করার আহবান জানান। 

ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা বলেন, আগের সমস্ত সংকটের মতো, এ যুদ্ধের ভয়াবহতা নারী ও শিশুদেরই ওপরই পড়বে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, এরূপ সংকটের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে নারী ও শিশুদের রক্ষা করার জন্য এখনো কোনো সামগ্রিক বৈশ্বিক কৌশল নেই। 

রাহীদ এজাজ পশ্চিমা মিডিয়ায় যুদ্ধের খবররে অসঙ্গতি এবং পক্ষপাতের ওপর দৃষ্টিপাত করেন।  তিনি বলেন, ইউক্রেন সংকটের পেছনে যে তথ্যযুদ্ধ চলছে, সেই যুদ্ধে কোন পক্ষ জিতবে তা এখনই বলা কঠিন। তিনি সত্য-নিরীক্ষার জন্য শুধুমাত্র প্রচলিত মিডিয়ার ওপর নির্ভর না করে অন্যান্য মিডিয়া যেমন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তথ্য খোঁজার ওপর জোর দেন।

রাষ্ট্রদূত শহীদুল হক বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় এ যুদ্ধের প্রভাব এবং জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, এ যুদ্ধে বৈশ্বিক মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লাভবান হবে এবং মানবতা হারবে। জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনগুলো এখানে মানা হচ্ছে না এবং দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ এ যুদ্ধের বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। 

এসআইপিজির সিনিয়র ফেলো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কিয়েভের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনই পুতিনের প্রধান লক্ষ্য। তিনি আরও মনে করেন যে, পুতিন এ যুদ্ধ বন্ধ করবেন না, যদি না ইউক্রেন ঘোষণা করে যে তারা কখনও ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেবে না।     

সিপিএসের সমন্বয়ক ও এনএসইউ’র রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল ওহাবের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সেমিনার শুরু হয়। সেমিনারের সঞ্চালক অধ্যাপক তৌফিক এম. হক পরিশেষে বলেন, এ যুদ্ধের ফলে বিশ্ব বদলে যাবে এবং এ সম্পর্কে সচেতন হতে সবাইকে এ পরিস্থিতির ওপর দৃষ্টি রাখা উচিত। সেমিনারে শিক্ষাবিদ, গবেষক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, কূটনীতিক, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীরা সশরীরে উপস্থিত এবং অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।   

আরএইচ