সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২২ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ও ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া উপবৃত্তি যোগ্য শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তির সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৩ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত তথ্য এন্ট্রি করা যাবে। এর আগে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

রোববার (১০ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে বিষয়টি জানিয়ে সব উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সোমবার (১১ এপ্রিল) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে নির্দেশনাটি প্রকাশ করা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের বাস্তবায়নাধীন সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতায় ২০২২ সালের ৬ষ্ঠ এবং ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তথ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক এইচএসপি এমআইএস সফটওয়্যারে এন্ট্রি এবং উপজেলায় প্রেরণের সময়সীমা ১০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। বিশেষ বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায় থেকে এইচএসপি এমআইএস সফটওয়্যারে শিক্ষার্থীদের তথ্য এন্ট্রি এবং উপজেলায় প্রেরণ করার সময়সীমা আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো।

এতে বলা হয়েছে, ১৩ এপ্রিল রাত ১২টায় তথ্য এন্ট্রির অপশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। উপজেলায় প্রেরিত তথ্যাদি যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এইচএসপি বা পিএমইএটিতে পাঠানোর সময়সীমা ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো।

বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এইচএসপি এমআইএস সফটওয়্যারে শিক্ষার্থীদের তথ্য এন্ট্রি করার পর উপজেলায় পাঠাচ্ছেন না উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সফটওয়্যারে ‘প্রাথমিক নির্বাচন’ মেন্যু থেকে ‘উপজেলা তালিকা জমাদান’ অপশন ব্যবহার করে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে উপজেলায় প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তার আওতাধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে উক্ত বিষয়টি অবহিতকরণসহ মনিটরিং করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে সৃষ্ট যেকোনো সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান এবং উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন।

উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইউজার আইডি/পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে বা অন্য কোনো কারণে এইচএসপি এমআইএস সফটওয়্যারে লগ ইন করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে mis.hsp@pmeat.gov.bd ঠিকানায় ই-মেইল আবেদন করা হলে ফিরতি ই-মেইলে পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে।

যেভাবে শিক্ষার্থী নির্বাচন

জানা গেছে, উপবৃত্তি পেতে কর্মসূচির আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে। আবেদন প্রাতিষ্ঠানিক কমিটির মাধ্যমে যাচাই বাছাইয়ের পর তা এইচএসপি এমআইএস সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তথ্য এন্ট্রির পর প্রতিষ্ঠান থেকেই তথ্য অনলাইনে উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে পাঠাতে হবে। উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপবৃত্তির জন্য উপজেলা বা থানায় পাঠানো সব আবেদনপত্র উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার উপদেষ্টা কমিটির বিবেচনার জন্য পেশ করবেন এবং অ্যাডভাইজারি কমিটির অনুমোদন নিয়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর তথ্য উপজেলা বা থানা থেকে এইচএসপি বা প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টে পাঠাবেন।

সারাদেশের উপবৃত্তি উপকারভোগী শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট অফিসের এমআইএস সেলের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এইচএসপি ইউনিটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে। লৈঙ্গিক ভিত্তিতে নয় বরং দারিদ্র্যের ভিত্তিতে উপকারভোগী শিক্ষার্থী নির্বাচন হবে। ফলে এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কম বেশি হতে পারে। শারীরিক প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রাক্তন ছিটমহলের বাসিন্দা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম যথাযথ যাচাই বাছাইয়ের পর সরাসরি এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে এই ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ দেওয়া সনদ বা প্রত্যায়ন পত্রের সত্যায়িত কপি এমআইএসে সংযুক্ত এবং সংরক্ষণ করতে হবে। সব শিক্ষার্থীর ১৭ সংখ্যার অনলাইন জন্মসনদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

শুধুমাত্র ষষ্ঠ এবং একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির আওতায় উপবৃত্তি পাওয়ার আবেদন করতে পারবেন। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যারা উপবৃত্তি কর্মসূচির বাইরে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নতুন ভর্তি হয়েছেন, তারা উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে না। শিক্ষার্থী অন্য কোনো সরকারি উৎস থেকে উপবৃত্তি বা অভিভাবক শিক্ষাভাতা গ্রহণ করলে উপবৃত্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। এছাড়াও শিক্ষা বোর্ড থেকে মেধা বা সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী উপবৃত্তি প্রাপ্তির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

১০টি উপজেলার ক্ষেত্রে উপবৃত্তির সফটওয়্যারে এন্ট্রি করা সব শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হবে। এ উপজেলাগুলো হলো- বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, আলিকদম, কুড়িগ্রামের সদর, চর রাজিবপুর, চিলমারী ও উলিপুর, দিনাজপুরের কাহারোল ও খানসামা এবং কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর।

যেভাবে তথ্য অন্তর্ভুক্তি

শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কয়েকদফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে- শিক্ষার্থীর জন্মসনদ নম্বর অবশ্যই ১৭ ডিজিটের হতে হবে। বাবা, মা বা অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (১০ অথবা ১৭ সংখ্যা) অবশ্যই এন্ট্রি করতে হবে। ১৩ সংখ্যার জাতীয় পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে প্রথমে জন্মের বছর বসিয়ে ১৭ সংখ্যায় রুপান্তর করতে হবে। শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেকোনো বৈধ বা সচল অনলাইন ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। অনলাইন বা এজেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট নম্বর ১৩ থেকে ১৭ ডিজিট এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট নম্বর ১১-১২ ডিজিট হতে হবে।

শিক্ষার্থীর অভিভাবক হবেন বাবা বা মা। কেবলমাত্র বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে অন্য কোনো ব্যক্তিকে (ভাই বা বোন বা দাদা বা দাদি বা নানা বা নানি) অভিভাবক হিসেবে নির্বাচন করা যাবে। তথ্য এন্ট্রির সময় বাবাকে অভিভাবক নির্বাচিত করলে বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসাবধারীর নাম হিসাবে বাবার নাম এন্ট্রি করতে হবে।

অভিভাবক হিসাবে মাকে নির্বাচিত করলে মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসাবধারীর নাম হিসাবে মায়ের নাম এন্ট্রি করতে হবে। বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে অন্য কোনো ব্যক্তিকে অভিভাবক নির্বাচিত করলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসেবধারীর নাম হিসাবে তার নাম এন্ট্রি করতে হবে। স্কুল ব্যাংকিং বা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে যার নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে হিসাবধারীর নাম হিসাবে তার নাম এন্ট্রি করতে হবে।

এএজে/জেডএস