জাতীয় শিক্ষাক্রম ও সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও বোর্ড পরীক্ষায় ধর্ম শিক্ষা বহালের দাবি জানিয়েছে ইসলামি শিক্ষা আন্দোলন বাংলাদেশ। শুক্রবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়। 

সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাও. এ কে এম মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য প্রফেসর সাইফুল ইসলাম খান।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলমান। বাকি ১০ ভাগ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনগণ অর্থাৎ শতভাগ ধর্মপ্রাণ নাগরিকের পক্ষ থেকে আজকের এ আয়োজন। আমরা জানি, বর্তমান সরকার ধর্মপ্রাণ, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ শিক্ষা পরিবারের সবাই ধর্মের বিষয়ে আন্তরিক। ফলে ইসলামি শিক্ষার উন্নয়নে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মাদ্রাসা অধিদপ্তর, বিএমটিটিআইকে সম্প্রসারণ, শিক্ষকদের বেতন-স্কেলে সমতা, দ্বীনি প্রতিষ্ঠানসমূহে ভবন নির্মাণ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমকে সম্প্রসারণ, দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ, জাতীয় যাকাত বোর্ড গঠনসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বর্তমান সরকার শিক্ষাক্রমে ধর্ম শিক্ষাকে বাদ দেয়নি; তবে শিরোনাম পাল্টে পরীক্ষা থেকে বাদ দিয়ে ধর্ম শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। আশা করি, ধর্মপ্রাণ এ সরকার নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিতে ধর্মশিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে।

বক্তারা আরও বলেন, ঘুষ, দুর্নীতি, কালোবাজারি, মাদকাসক্তি, মাতা-পিতার অবাধ্যতা, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, পুরুষ নির্যাতন, যৌতুক, চাঁদাবাজি, সাম্প্রদায়িকতাসহ নীতি-নৈতিকতাহীন কার্যক্রম থেকে মুক্তির জন্য ধর্মশিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচিতে এ বিষয় সবচেয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে যদি যোগ্য শিক্ষকের মাধ্যমে পাঠদান ও অনুশীলন করা যায় তাহলে আদর্শ জাতি ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বা গড়া সম্ভব হবে। 

এ সময় ইসলামি শিক্ষা আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৪ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো,

১. ১০ম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় ধর্ম শিক্ষা ৫০% অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বোর্ড পরীক্ষা থেকে বাদ রেখে শুধু শিখনকালীন মূল্যায়ন দিয়ে ইসলাম শিক্ষার সুফল প্রত্যাশা করা অবাস্তবতার নামান্তর।

২. দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সর্বস্তরে ইসলামসহ ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৩. শিক্ষা সিলেবাস থেকে বিবর্তনবাদসহ ধর্মবিরোধী সব শব্দ, বাক্য ও বিষয় অপসারণ করতে হবে।

৪. ২০১০ এর শিক্ষানীতির পৃষ্ঠা ১৭ এ বর্ণিত ধারা বাস্তবায়নকল্পে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম বাজারে প্রবেশের জন্য শিক্ষার সর্বস্তরে আরবি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৫. শিক্ষা ও প্রশাসন ক্যাডারের সকল প্রশিক্ষণে নীতি-নৈতিকতার উন্মেষ সাধনের নিমিত্তে ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৬. জাতীয় শিক্ষানীতির দাবি অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক স্তরের ২টি শিশু শ্রেণি এবং প্রাথমিক স্তরের ১ম ও ২য় শ্রেণিতে ইসলাম তথা ধর্মশিক্ষার নির্ধারিত বই থাকতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের ৪র্থ শ্রেণির মতোই যথাযথ মূল্যায়নের আওতায় আনতে হবে।

৭. শিখন-ঘণ্টার বিষয়ভিত্তিক বণ্টনে ধর্মশিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হবে।

৮. প্রাক-প্রাথমিকসহ প্রাথমিক স্তরে ধর্মশিক্ষার জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং এ স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সব শাখায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

১০.মাদ্রাসা অঙ্গনে ইবতেদায়ী স্তরে বন্ধ করা মজুরির তালা খুলতে হবে। দীর্ঘ ১৪ বছরে একটি ইবতেদায়ী মাদ্রাসাও মজুরি পায়নি। এছাড়া প্রাইমারির মতো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

১১. জনবল কাঠামোতে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে হবে। প্রভাষকদের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগপ্রতি সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

১২. এনসিটিবিসহ ইসলামি শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক নীতি নির্ধারণী স্থানে যোগ্য আলেমদের প্রতিনিধি হিসেবে স্থান দিতে হবে।

১৩. মাদ্রাসার ইবতেদায়ী প্রধানকে প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মর্যাদা ও সমান সুযোগ নিতে হবে।

১৪. শিক্ষার সর্বস্তরে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আহলে বাইত, সাহাবায়ে কেরাম ও আল্লাহর ওলীগণের জীবন ও শিক্ষা সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইসলাম ও মহানবীর আদর্শ, স্বীকৃত উৎস থেকে শিখতে না পারলে ইসলামের অপব্যাখ্যা শিখে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, চরমপন্থা, নৈতিকতা বিবর্জিত মন মানসিকতা সৃষ্টি হয়ে দেশকে ত্রাসের দিকে নিয়ে যাবে। 

এসকেডি