ভাষাশহীদদের প্রতি ইউজিসির শ্রদ্ধা
ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন/ ছবি- ঢাকা পোস্ট
মায়ের ভাষার দাবিতে প্রাণ দেওয়া শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে কমিশনের সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উৎযাপন কমিটির সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ সময় তারা ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর, প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. ফেরদৌস জামান, গবেষণা সহায়তা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক মো. কামাল হোসেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ও ইউজিসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ওমর ফারুখ, সাধারণ সম্পাদক ড. মো. মহিবুল আহসান, ইউজিসি মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উৎযাপন কমিটির সদস্য সচিব বিষ্ণু মল্লিক, ইউজিসি চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং ইউজিসি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা/ ছবি- ঢাকা পোস্ট
করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে অমর একুশে উৎযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে রাত ১২টা এক মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
বিজ্ঞাপন
এ সময় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের সুর বাজতে থাকে। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে ফুল দেন জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস এম এম নাঈম রহমান। এরপর সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর মন্ত্রীসভার সদস্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে পাঁচ জ্যেষ্ঠ নেতা ফুল দেন। এরপর আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতারা ফুল দেন। পরে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদসহ আনসার গ্রাম ও প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও বিদেশি সংস্থার প্রধানরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে ঢাবি শিক্ষকরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ/ ছবি : ঢাকা পোস্ট
প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, জাতীয় শ্রমিক লীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, গণসংহতি আন্দোলন, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান নিরাপদ রাখতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা।
১৯৫২ সালের এই দিনে (২১ ফেব্রুয়ারি) বাংলা ভাষা আন্দোলনকে দমন করতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ছাত্ররা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বাংলা ভাষার দাবিতে রাজপথে মিছিল করেন। সেই মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকে। আহত হন আরও অনেক ভাষাপ্রেমী।
এনএম/এইচকে