হল খোলার দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জাবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান/ ফাইল ছবি

হল খোলার দাবিতে দেশের সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। রাজশাহী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল খুলে দিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কী ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)? 

এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলছে কমিশন। ইউজিসির সদস্যরা বলছেন, হুট করে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না। হল খুলে দিলে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। হলে স্বাস্থ্যবিধি মানানোটাও অনেকটা কঠিন। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা দিয়ে হল খোলার পরিকল্পনা করছেন তারা। 

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য প্রফেসর বিশ্বজিৎ চন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে ইমোশনাললি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়ে হল বা ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া যায় না। কারণ ব্রিটেনে নতুন ধরনের করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নতুন ধরনের করোনা পাওয়া গেছে। তাই হল খুলে দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের বিপদের মুখে ফেলে দেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, এখন যেমন হল খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, খোলার পর একটি ছেলে বা মেয়ে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তখন প্রশাসনের বিরুদ্ধে উল্টো আন্দোলন করবে। তখন স্লোগান হবে ‘আমার ভাই-বোন মরল কেন প্রশাসন জবাব দে’।

ইউজিসির সদস্য প্রফেসর বিশ্বজিৎ চন্দ

বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর কেমন অবস্থা আমরা সবাই জানি। এক রুমে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করে। একজন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হলে সবাই তখন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া হলে স্বাস্থ্যবিধি মানানোটাও অনেকটা কঠিন। তাই হল খোলার আগে করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চাই। করোনা হয়তো জিরোর কোটায় যাবে না, তবে আরও নিয়ন্ত্রণে আসতে হবে।

ইউজিসির এ সদস্য বলেন, করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা টিকা নিচ্ছেন। পরের ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে যে শিক্ষার্থীরা থাকেন, তাদের টিকা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবাই এটা পেয়ে যাবে।

বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটা যদি হয় তবে আস্তে আস্তে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, বিশেষ করে যেখানে আবাসিক ব্যবস্থা আছে, সেগুলোতে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। তাই টিকার বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করতে চাই।

হল-ক্যাম্পাস খোলার এক দফা দাবিতে উত্তাল রাবি

করোনার শনাক্তের হার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা শনাক্তের হার এখন দুই বা তিন শতাংশ, যেটা বলা হচ্ছে এটার মধ্যে বিদেশ যাওয়ার যাত্রীরাও আছে। ইউজিসির এ সদস্য বলেন, যারা বিদেশে যাচ্ছেন তারা করোনা নেই এটা জেনেই পরীক্ষা করাচ্ছেন। এখন মোট যে পরীক্ষা হচ্ছে তার হয়তো ৬০-৭০ ভাগ বিদেশে যাওয়ার যাত্রী। বাকিরা সাধারণ, যারা করোনার লক্ষণ নিয়ে পরীক্ষা করাতে যায়। তাই বাকি সংখ্যা ধরলে শনাক্তের হার কিন্তু ১০ শতাংশের ওপরে যাবে। তাই ইমোশনাললি এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।

এই অধ্যাপক বলেন, ২৩ ফেব্রুয়ারি দেশের উপাচার্যদের নিয়ে একটা বৈঠক আছে। সেখানে গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার এজেন্ডা আছে। এর বাইরে হল ও ক্যাম্পাস খোলার ব্যাপারে আলোচনা উঠলে হয়তো বিষয়টি নিয়ে কথা হবে।

দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ১৭ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় দফায় দফায় বাড়ে ছুটি। সেই ছুটি চলমান রয়েছে। সবশেষ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ২৮ ফেব্রুয়ারি (রোববার) পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

হল খোলার দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ

এর মধ্যে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়। শুরুতে সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধা ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে সেই সিদ্ধান্ত শিথিল করে সরকার। বর্তমানে মনোনীত সম্মুখসারির যোদ্ধা এবং ৪০-ঊর্ধ্ব বয়সীরাই টিকা নিতে পারছেন।

এদিকে করোনার কারণে ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলও খালি করে সব কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। পরে সেশনজট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করে কর্তৃপক্ষ। যদিও অনলাইনে ক্লাসের সুবিধা সব শিক্ষার্থী সমানভাবে নিতে পারেননি, এমন সমালোচনা রয়েছে।

দেশে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার দুই দিন পর দেশজুড়ে সাধারণ ছুটির ঘোষণা আসে। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সেই কয়েক দফায় বাড়ে। ৬৬ সাধারণ ছুটির দিন পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করার অংশ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব কিছু ধারাবাহিকভাবে খুলে দেয় সরকার।

এনএম/এসএসএইচ