খাতা টেম্পারিং করে চাকরি হারালেন ভিকারুননিসা শিক্ষক
প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দিতে পরীক্ষার খাতা টেম্পারিং করে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণ মেলায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছে রাজধানী ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষক ফাতেমা জোহরা হক। তিনি এ স্কুলে ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক। যদিও একই অভিযোগে অধ্যক্ষ অপসারিত হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) স্কুলের গর্ভনিং বডির সভাপতি ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত শিক্ষক ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক পদের নিয়োগ পরীক্ষার এক প্রার্থীর খাতায় টেম্পারিং করে নম্বর বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অভিভাবক ফোরামের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত করে এর প্রমাণ পায় গঠিত কমিটি। এরপর আইনি অন্যান্য ধাপ শেষ করে বৃহস্পতিবার তাকে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করা হলো।
জানতে চাইলে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুন নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার এ শিক্ষককে চূড়ান্তভাবে অপসারণ করা হয়েছে। সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ওনি তো শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। তিনি এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ না। যদি ব্যবস্থা নিতে হয় তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় নেবে।
শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক পদ না থাকলেও নিজের লোককে অবৈধভাবে নিয়োগ দিতে ভিকারুননিসার সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে তিনি ছলচাতুরীর আশ্রয় নেন। সাধারণ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের একাংশকে দিয়ে খাতা মূল্যয়ন করান। সেখানে তিনি দায়িত্ব দেন ফাতেমা জোহরা হককে। অধ্যক্ষের নির্দেশে একজন পরীক্ষার্থীর খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেন ফাতেমা জোহরা। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ হলে পরিচালনা পর্ষদের ওই সময়ের সভাপতির হস্তক্ষেপে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করা হয়।
এ ঘটনায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরাম শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করে। এতে বলা হয়, পরিচালনা পর্ষদের কিছু সদস্য এবং অধ্যক্ষ নিজে স্বার্থসিদ্ধির জন্য পদ না থাকলেও পদ দেখিয়ে বিধিবহির্ভুতভাবে প্রশাসনিক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন।
এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি করে দেন। কমিটি তদন্তে খাতা মূল্যায়নে ঘষামাজার প্রমাণ পায়। এরপরই অধ্যক্ষ ফওজিয়াকে অপসারণ করে মন্ত্রণালয়।
তদন্তে প্রমাণ মিলে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে গিয়ে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করতে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীর ভুল উত্তরের ওপর ঘষামাজা করে সঠিক উত্তর লেখে দেন এ অভিযুক্ত শিক্ষক। এতে প্রার্থীর মোট নম্বর বেড়ে যায়। এভাবেই পছন্দের প্রার্থীকে রাজধানীর স্বনামধন্য ভিকারুননিসা স্কুলে নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করে একটি চক্র। সেই কাজ করতে গিয়ে ধরা খেলেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা জোহরা হক। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। তার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
একই অভিযোগে সম্প্রতি অপসারণ করা হয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফওজিয়াকে। যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি।
জালিয়াতির এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে ফাতেমা জোহরার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার নির্দেশ দেন।
বোর্ডের ইস্যু করা চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী শিক্ষক ফাতেমা জোহরা হকের অবৈধভাবে খাতা মূলায়নের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিকে অভিযুক্ত শিক্ষক নিজেই খাতায় ভুল উত্তর কেটে শুদ্ধ উত্তর লিখে দিয়ে নম্বর বাড়ানোর দায় স্বীকার করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি নৈতিকভাবে এ পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
এর আগে গত ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনোয়ারুল হক এ শিক্ষককের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন।
ওই চিঠিতে বলা হয়, ভিকারুননিসায় স্কুলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষায় খাতা মূল্যায়নের সময় সংগঠিত অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় ফাতেমা জোহরা হকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অভিভাবক ফোরামের নেতারা অভিযোগে বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সরকারি কর্মকর্তা হয়েও এ অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে চুপ থাকেন এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতি দেন।
এনএম/এসএম
বিজ্ঞাপন