রাজধানীর স্বনামধন্য মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকসহ জনবল নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কারণ, শিক্ষক ও অন্যান্য জনবল নিয়োগের আবেদন ফি দেখে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার মতো অবস্থা।

গত মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) স্কুল ও কলেজ শাখার ওয়েবসাইটের পাশাপাশি দুইটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তি ঘেঁটে দেখা যায়, ১৪টি ক্যাটাগরিতে শিক্ষকসহ ১০০ জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক (বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম) এর জন্য আবেদন ফি ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। প্রভাষক ও সহকারী প্রোগ্রামারের জন্য আবেদন ফি ঠিক করা হয়েছে তিন হাজার টাকা। প্রদর্শক পদে আবেদন করতে গেলেই গুণতে হবে দুই হাজার টাকা।

অন্য ছয়টি (সহকারী শিক্ষক ও নার্স) পদে আবেদন ফি ঠিক করা হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা। সর্বনিম্ন আবেদন ফি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদের জন্য এক হাজার টাকা। সব আবেদন ফি অফেরতযোগ্য, যা ব্যাংক ড্রাফট করে জমা দিতে হবে।

সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন কাঠামো ২৩০০০-৫৫৪৭০ টাকা। এই পদে আবেদনের জন্য থাকতে হবে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা। সে সঙ্গে ইংরেজিতে পাঠদান ও কথোপকথনে পারদর্শী হতে হবে।

প্রভাষক পদে বেতন কাঠামো ২২০০০ থেকে ৫৩০৬০ টাকা। একই বেতন কাঠামো সহকারী প্রোগ্রামারের ক্ষেত্রেও। প্রদর্শকের বেতন কাঠামো ১৬০০০ থেকে ৩৮৬৪০ টাকা। সহকারী শিক্ষক থেকে নার্স পর্যন্ত বেতন কাঠামো ১২৫০০ থেকে ৩০,২৩০ টাকা।

অন্যান্য পদের বেতন কাঠামো- অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর ৯৩০০-২২৪৯০ টাকা, ল্যাব সহকারী ৮৮০০-২১৩১০ টাকা, প্লাম্বার ৮৫০০-২০৫৭০ টাকা ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ৮২৫০-২০০১০ টাকা।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষ করে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগের আবেদন ফি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

ফেসবুকে শেয়ার করা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পোস্টে ধ্রুপদী নীহারিকা নামে একজন কমেন্ট করেছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া খুবই দরকার। কারণ তারা শুধুই টাকা ইনকামের জন্য এ বিজ্ঞাপন দেয় শিক্ষক নিয়োগের জন্য নয়।

সেখানে সবুজ আহমেদ নামে একজন কমেন্ট করেছেন, লাখো বেকারদের থেকে ফি নিয়ে শিক্ষককে বেতন দেওয়া যাবে সারাজীবন, এটা এক প্রকার বিজনেস।

শাকিবুল ইসলাম লিখেছেন, এতো টাকা আবেদন ফি! এটা বেকারদের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কি? এদেশে যার যেমন ইচ্ছে তেমনি লুটেপুটে খাচ্ছে, কোনো জবাবদিহিতা নেই। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। 

আবেদন ফি কেন এত বেশি জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ফাওজিয়া রাশেদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ফি নির্ধারণ করেছে গভর্নিং বডি। আমি এসব বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, এটা গভর্নিং বডির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ডিজির একজন প্রতিনিধি আনব, তিনি হবেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ বা সিনিয়র কলেজের নামকরা লোক। ঢাকার ডিসির প্রতিনিধি আসবেন। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা আসবেন। প্রশ্ন তৈরি করার জন্য মডারেটর দল থাকবে। প্রত্যেককে ভালো সম্মানী দিতে হবে। নাহলে কিন্তু তারা আসবেন না।

তিনি বলেন, গত দুই-তিনটা নিয়োগ পরীক্ষায় আমরা যে ফি নিয়েছি, সেটাও কম ছিল না। কিন্তু তারপরও স্কুলের ফান্ড থেকে তিন থেকে চার গুণ ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এবার যে ফি ধার্য করা হয়েছে, তারপরও আমাদের অর্থ কমিটির হিসাব, আমাদের এবার তিন থেকে চার গুণ না হলেও দ্বিগুণ ভর্তুকি দিতেই হবে। এটা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যারা পরীক্ষার্থী তাদের থেকে যদি আমি টাকা না নিই, তাহলে টাকাটা যাবে স্কুলের ফান্ড থেকে। সেটা কাদের টাকা? স্কুলের ছেলেমেয়েদের টাকা। কারো না কারো পকেটে হাত পড়ে যাবেই।

এ বিষয়ে জানতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে কল দিলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এএজে/এসকেডি