নিয়মবহির্ভূত ৫ দিন স্কুল বন্ধ রাখার নোটিশ দেওয়ায় মনিপুর স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অস্থায়ী সভাপতিকে অপসারণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। এজন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে শিক্ষাবোর্ড। আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে কেন তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না এ মর্মে শোকজ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় তাকে এ শোকজ দেওয়া হয়।

কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর আবু তাহের মো. মোয়াজ্জেম হোসেন সই করা এ চিঠিতে এ শোকজ করা হয়। এতে বলা হয়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেব দায়িত্ব প্রদানে অবহেলা এবং এখতিয়ার বহির্ভূক্ত ৫ দিন ছুটি দেওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত নির্দেশনা সরাসরি অমান্য। তাকে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে ছুটি ও অধ্যক্ষকে যোগদানের বাধা দেওয়ার ব্যাখ্যা তিন কর্ম দিবসের মধ্যে দিতে হবে। 

এর আগে বিকেলে তাকে শোকজ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন, শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুধবার (৮ মার্চ) রাতে স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ৫ দিন স্কুল বন্ধ ঘোষণার নোটিশ দিয়েছেন। এটি তিনি করতে পারেন না। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নতুন নিয়োগ দেওয়া অধ্যক্ষকে তার পদে যোগদান করতে দিচ্ছেন না। এসব অসহযোগিতার কারণে সভাপতিকে এ পদ থেকে অপসারণ করতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। আজকেই তাকে নোটিশ দেওয়া হবে।

এর আগে বুধবার (৮ মার্চ) অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন এক নোটিশে বৃহস্পতিবার থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রমসহ সব দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন।

তবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বুধবার আরেক নোটিশে সভাপতির দেওয়া ছুটির নোটিশটিকে বিধিবহির্ভূত উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষকের সংরক্ষিত তিন দিনের ছুটি থেকে শুধু বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করেন। নোটিশে তিনি বলেন, রোববার (১২ মার্চ) থেকে যথারীতি শ্রেণি ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু থাকবে।

অন্যদিকে একই ঘটনায় এডহক কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমদ।  বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, এডহক কমিটির কমিটির ছুটি দেওয়ার ক্ষমতা নেই। কমিটির কাজ হচ্ছে সরকারি কাজে সহায়তা করা। তা না করলে প্রয়োজনে কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হবে। 

তিনি আরও বলেন, আগের প্রধান শিক্ষকের (মো. ফরহাদ হোসন) বয়স শেষ হয়েছিল এবং তিনি অবৈধভাবেই চেয়ারে ছিলেন। তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে আরেক শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কমিটি তাকে চেয়ারে বসতে দিচ্ছে না। এটা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ২০২০ সালে তদন্ত করে বলেছিল মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ পদে মো. ফরহাদ হোসেনের নিয়োগ অবৈধ। এরপর ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আরেক তদন্তেও বেরিয়ে আসে অধ্যক্ষ পদে ফরহাদ হোসেনের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি বিধিসম্মত হয়নি। এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। কারণ, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির প্রভাবশালী একটি পক্ষ ফরহাদ হোসেনের পক্ষে।

এ অবস্থায় আদালতের নির্দেশে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষক মো. জাকির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিতে নির্দেশ দেয় মাউশি। পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে লেখা পত্রে তিন কর্মদিবসের মধ্যে এই ব্যবস্থা নিতে বলেছিল মাউশি। তবে পরিচালনা কমিটি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এরপর ৬ মার্চ দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির মূল বালিকা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান জাকির হোসেন। তখন একদল শিক্ষক তাকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে গিয়ে আসনে বসান। পরে বিভিন্ন ক্যাম্পাসের শিক্ষকেরা এসে তাকে অভিনন্দন জানান। এ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ওই দিন ক্যাম্পাসে পুলিশও আসে।

এনএম/এমএ