দেশের সব পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, পাসের হার এমনকি স্কুল ভর্তিতে নারী এগিয়ে রয়েছেন। শিক্ষার সব সূচকে নারীরা এগিয়ে থাকলেও চাকরির বাজারে সেভাবে এগিয়ে যেতে পারছেন না। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া সরকারি কর্ম কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে সাধারণ বিসিএসগুলোতে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ পর্যন্ত নারী পাওয়া গেছে। অর্থাৎ বাকি ৭৩ শতাংশ আবেদনকারী পুরুষ। পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারছেন না তারা। তবে বিশেষ বিসিএসে চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের প্রায় অর্ধেক নারী। এক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারী কিছুটা তাল মেলাতে পেরেছেন। যদিও বিশেষ বিসিএসে নারী আবেদনকারী ছিলেন পুরুষের তুলনায় বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামাজিক কাঠামোয় এখনও শৃঙ্খলিত নারীরা। পারিবারিক এবং আর্থিক কাঠামোয় নারীকে নির্ভর করতে হয় পুরুষের উপর। সামনে এগিয়ে যেতে নানা কটু কথার পাশাপাশি নারীদের শিকার হতে হয় সহিংসতার মতো ঘটনারও।

বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ বিসিএসের (৪২তম) মাধ্যমে চিকিৎসক নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২০ সালের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই বিসিএসে ৪ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সুপারিশ করেছিল পিএসসি, যাদের মধ্যে ৪৯.০২ শতাংশ নারী। নারীর সংখ্যা ১ হাজার ৯৬১ জন। অন্যদিকে সুপারিশকৃতদের মধ্যে ২ হাজার ৩৯ জন ছিলেন পুরুষ। যা শতকরা ৫০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

৪০তম বিসিএস (সাধারণ) পরীক্ষায় ১ হাজার ৯৬৩ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৫২ জন ছিলেন পুরুষ। যা শতকরা ৭৩.৯৭ শতাংশ। ৫১১ জন নারী নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত হয়েছিলেন। যা মোট নিয়োগের ২৬.০৩ শতাংশ।

৩৯তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষায় ৬ হাজার ৭৯২ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিল পিএসসি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬০০ জন পুরুষ, যা শতকরা ৫৩ শতাংশ। অন্যদিকে ৩ হাজার ১৯২ জন নারী নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। যা শতকরা ৪৭ শতাংশ।

৩৮তম বিসিএস (সাধারণ) পরীক্ষায় ২ হাজার ২০৪ জনের মধ্যে ১ হাজার ৬১১ জন পুরুষকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। যা শতকরা ৭৩.০৯ শতাংশ। ৫৯৩ জন নারী ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন। যা ২৬.৯১ শতাংশ।

৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে ১ হাজার ৩১৩ জনকে নিয়োগের জন্য পিএসসি সুপারিশ করে। তার মধ্যে ৭৫.৪০ শতাংশ পুরুষ। এই সংখ্যা ৯৯০ জন। নারীর সংখ্যা ৩২৩ জন অর্থাৎ ২৪.৬০ শতাংশ।

সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ৩৯তম ও ৪২তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক অর্থাৎ ৪৭ ও ৪৯.০৩ শতাংশ নারী ছিলেন। আর ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে নারী সংখ্যা সর্বনিম্ন অর্থাৎ ২৪.৬০ শতাংশ।

আবেদনেও নারীরা পিছিয়ে

পিএসসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের হিসাব অনুযায়ী, ৩৭তম বিসিএসে পুরুষ আবেদনকারী ছিলেন ৬৫.১৮ শতাংশ, ৩৮তম বিসিএসে ৬৩.৪৭ শতাংশ, ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে ৪৩.৬৫ শতাংশ, ৪০তম বিসিএসে ৬১.৬২ শতাংশ এবং ৪২তম বিশেষ বিসিএসে ৪৪.০৮ শতাংশ।

৩৯তম ও ৪২তম বিশেষ বিসিএসে নারী আবেদনকারী ছিলেন পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। ৩৯তম বিসিএসে পুরুষের তুলনায় নারী আবেদনকারী ছিলেন ৫৬.৩৫ শতাংশ এবং ৪২তম বিসিএসে ৫৫.৯২ শতাংশ

এনএম/এসকেডি