সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের জালিয়াতি সংখ্যা বাড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও পরীক্ষক দিয়ে সেই জালিয়াতি বন্ধ করতে পারছে না অধিদপ্তর। এবার ডিজিটাল ডিভাইস জালিয়াতি ধরতে অভিনব এক মেশিন বানিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ‘সুরক্ষা’ নামে এ যন্ত্রটি পরীক্ষায় জালিয়াতির ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করবে। পরীক্ষার হলে কোনো পরীক্ষার্থীর কানে বা অন্যকোনো অঙ্গে কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ঢোকানো থাকলে হলে অথবা কোনো পরীক্ষার্থী ওই ধরনের ডিভাইস কানে রেখে থাকলে বুয়েট উদ্ভাবিত যন্ত্রে একটি লাইট জ্বলে উঠবে এবং শব্দ সংকেত বেজে উঠবে।

আগামী ২০ মার্চ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৫টি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে এই ডিভাইস প্রতিরোধ যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইটি) এই যন্ত্র তৈরি করেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সচিব ফরিদ আহাম্মদ।

তিনি জানান, কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় জালিয়াতির উদ্দেশ্যে কানের ভেতরে ডিজিটাল ডিভাইস রাখলে এই যন্ত্র তার সন্ধান দেবে। যন্ত্রটির নাম দেয়া হয়েছে ‘সুরক্ষা’। আগামী ২৯ মার্চ তৃতীয় ধাপে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের যে পরীক্ষা হবে, ওই পরীক্ষা থেকেই নকল ধরতে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো এই যন্ত্রটি ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ সফলতা পেয়েছি। সেজন্য আগামী ২৯ মার্চ পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটির ব্যবহার শুরু হবে। খুব শিগগিরই এর শতভাগ ব্যবহার শুরু হবে। সফল হলে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তর ডিজিটাল জালিয়াতির রোধে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করবেন বলে আশা করেন তিনি। 

সচিব বলেন, জালিয়াতির ডিভাইস কোনো পরীক্ষার্থীর কানে ঢোকানো হলে অথবা কোনো পরীক্ষার্থী ওই ধরনের ডিভাইস কানে রেখে থাকলে বুয়েট উদ্ভাবিত যন্ত্রে একটি লাইট জ্বলে উঠবে এবং শব্দ সংকেত বেজে উঠবে।

সচিব জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার প্রতিরোধে যন্ত্র উদ্ভাবনের জন্য বুয়েটের আইআইটিসি-কে ইনোভেশন ফান্ডের আওতায় ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ যন্ত্র তৈরিতে প্রাথমিকভাবে ৮ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হবে। পরে বেশি উৎপাদন করা হলে দাম পড়বে ৫ হাজার ৫০০ টাকা।

ফরিদ আহাম্মদ বলেন, আগামী ২৯ মার্চ তৃতীয় ধাপের নিয়োগ পরীক্ষা থেকেই এই যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় ২৫টি যন্ত্র দিয়ে ৫টি টিম করে পরীক্ষা কেন্দ্রে এই যন্ত্রের পাইলটিং করা হবে। পরীক্ষার্থী বেশি এমন ৫টি জেলা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ এই জেলাগুলোতে আমরা পাইলটিং করবো।

সচিব বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে লিখিত (এমসিকিউ) পরীক্ষা ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। ৬ হাজার ২০১টি পদের বিপরীতে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ জন। মৌখিক পরীক্ষা সম্ভাব্য তারিখ ৫ থেকে ২০ মে। আর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন।

তিনি জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ দুটিতে অন্যান্য বিভাগের চেয়ে পরীক্ষার্থী বেশি। তাই পরীক্ষার সুষ্ঠু করতে একটু বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে। পরীক্ষার দিন প্রতিটি কেন্দ্র একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে।

এনএম/জেডএস