শর্ত সাপেক্ষে মিলতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইনে পরীক্ষা
করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম। বার্ষিক পরীক্ষাসহ গত বছরের অষ্টম শ্রেণির সমাপণী এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এইচএসসিতে অটো পাসের ঘোষণায় মেধার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এ অবস্থায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শর্ত সাপেক্ষে অনলাইনে একাডেমিক পরীক্ষা, অ্যাসাইমেন্ট, ক্লাস টেস্ট নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে এখনই না। এজন্য আরও দুই মাস অপেক্ষা করা হবে। এরমধ্যে করোনার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সরাসরি ক্লাসে ফিরে যাওয়া হবে, পরিস্থিতি উন্নতি না হলে অনলাইনে পরীক্ষায় নেওয়া হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুমতি আপাতত মিলছে না।
এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার (৬ মে) বৈঠকে বসছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যরা। বেলা ১১টায় জুম প্লার্টফর্মে এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছরে ১৭ মার্চ থেকে বন্ধে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব স্তুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সময় অনলাইনে ক্লাস হলেও হচেছ না কোন পরীক্ষা। ফলে দীর্ঘ সেশনজটের মুখে পড়তে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। এ সংকট উত্তরণে অনলাইনে পাবলিক ও একাডেমিক পরীক্ষা নেওয়া যায় কি তা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে দুটি কমিটি করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এরমধ্যে উচ্চ শিক্ষা পর্যাযে করা কমিটির সদস্যরা কীভাবে অনলাইন পরীক্ষা নেওয়া যায় তার একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। সেই রূপরেখা চূড়ান্ত করতে আজ বৈঠকে বসছেন কমিটির সদস্যরা। সেখানে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে তৈরি করা সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হবে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৫ এপ্রিল প্রথম সভা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা কমিটির বাইরে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন বিশেষজ্ঞকে নতুন করে কো-অপ্ট (যোগ) করা হয়।
সেই সভায় দেশ-বিদেশে কীভাবে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা কতটুকু সম্ভব, বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। তারা সেটা করে কমিটির কাছে উপত্থাপন করেছে। এখন সবার মতামত ও সুপারিশের আলোকে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আজকের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
জানা গেছে, সুপারিশে অনলাইনভিত্তিক সৃজনশীল অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্ট, এমসিকিউ বা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নে পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা বা ভাইভার মাধ্যমে মূল্যায়নের বিষয়গুলো অনলাইনে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করা যায় কি তা ঠিক করতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির এই সভা। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়গুলো চূড়ান্ত হতে পারে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটি বুধবার (৫মে) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে অনলাইনে সব বর্ষের চূড়ান্ত (ফাইনাল) পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। ইউজিসির কোনো কোনো সদস্য মনে করছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও উৎসাহী হবে, যা আজকের সভায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ওই কমিটি সূত্রে জানা গেছে, তারা অনলাইনভিত্তিক সৃজনশীল অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস টেস্ট, এমসিকিউ বা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নে পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা বা ভাইভার মাধ্যমে মূল্যায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে রূপরেখাটি তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভাইভার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তারা।
তবে কোনো শিক্ষার্থী বা বিশ্ববিদ্যালয় যদি এ পদ্ধতিতে আসতে না চায় তবে তাকে সেই স্বাধীনতা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যে শিক্ষার্থী অনলাইনে পরীক্ষা দেবে না তিনি পরবর্তী সময়ে সরাসরি পরীক্ষা দিতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, অনলাইনে পরীক্ষা নিতে গত ২৪ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে একটি সভা হয়। সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শ্রেণি ও পাবলিক পরীক্ষা অনলাইনে আয়োজনের জন্য সুপারিশ করতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন পরীক্ষা অনলাইনে গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ দেওয়ার জন্য আরেকটি কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ইউজিসি’র সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগমকে।
এনএম/এসএম