জুলাইয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
এবার বরখাস্ত হচ্ছেন ইউজিসির সাবেক সচিব ফেরদৌস জামান

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক সচিব ড. ফেরদৌস জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৯ জানুয়ারি কমিশনের পূর্ণ কমিশনের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সভার কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
জুলাই মাসে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় হঠাৎ সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে এ শাস্তির মুখে পড়লেন তিনি। এরআগে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সচিবের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ফেরদৌস জামানকে রিসার্চ সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগের পরিচালক পদে বদলি করা হয়।
কমিশনের সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, কমিশনের সাবেক সচিব (বর্তমানে আরএসপি বিভাগের পরিচালক) ড. ফেরদৌস জামানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের বিষয়ে সত্যতা নিরূপণের নিমিত্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সচিব ড. মো. আবদুল মজিদকে আহ্বায়ক করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন এবং কমিশনের উপসচিব (লিগ্যাল) নুরনাহার বেগম শিউলীর সমন্বয়ে ৩ সদস্যের ফ্যাক্টস্ ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির সার্বিক পর্যবেক্ষণ হলো— ইউজিসি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানে ড. ফেরদৌস জামান যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এমনটি একাধিকবার তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাকে বারবার পদোন্নতি দিয়ে, চাকুরি স্থায়ীকরণ করে, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে, প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং একটি বড় ধরনের প্রশাসনিক বিচ্যুতি যা চাকুরি শৃঙ্খলার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই এই বিষয়ে গঠিত কমিশনের সভায় উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করা আবশ্যক।
এই পর্যবেক্ষণের আলোকে কমিশনের সভায় ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ অনুযায়ী ড. ফেরদৌস জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যাপ্ত সুযোগ প্রদান করে আইনি বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’ যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য বলা হয়। এই বিষয়ে কমিশনের লিগ্যাল সেলের মতামত/পরামর্শ গ্রহণ করে বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কমিশনের অন্য একটি সূত্র বলছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন ১৬ জুলাই মধ্যরাতে হঠাৎ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি প্রতিষ্ঠান মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সব শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই নির্দেশনা মূল কারিগর ছিলেন ইউজিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর আলমগীর ও সচিব ফেরদৌস জামান।
এই অভিযোগে গত ২৬ নভেম্বর খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে বহিষ্কার করা হয় প্রফেসর আলমগীরকে। আর সর্বশেষ ফেরদৌস জামানকে বহিষ্কার করা হলো।
যদিও এই দুইজনকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তাদের দাবি ছিল তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের নির্দেশ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা বলছে, জুলাই মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলন ও সংঘর্ষে ছয় জন নিহত হওয়ার পর ১৬ জুলাই হঠাৎ করে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এরপর শিক্ষার্থীরা হল ছাড়া হয় এবং সারা দেশে তাদের ওপর হামলা-নির্যাতন শুরু করে ছাত্রলীগ-পুলিশ। তৎকালীন সরকারকে খুশি করতে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. আলমগীর ও সচিব ফেরদৌস জামান।
এনএম/এআইএস