ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিকুজ্জামান মুশফিকের (২০) রহস্যজনক মৃত্যুকে কেবল ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে দেখার সুযোগ সীমিত বলে মন্তব্য করেছে সোচ্চার–টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ।

সংগঠনটির মতে, মৃত্যুর আগে-পরে সহপাঠীদের বুলিং, কটূক্তি ও অপমানের অভিযোগ এবং ঘটনাক্রমের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট এ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করে তুলেছে।

রোববার (২৩ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো সোচ্চারের মিডিয়া ও পাবলিকেশন ডিরেক্টর শফিকুল ইসলাম মাহফুজের সই করা বিবৃতিতে এমন দাবি জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিকুজ্জামান মুশফিকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় আমরা গভীর শোক ও উদ্বেগ জানাচ্ছি।

সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ড. শিব্বির আহমদ ও সেক্রেটারি ড. মাহফুজুল হাসান বলেন, একজন তরুণ শিক্ষার্থীর এমন আকস্মিক মৃত্যু শুধু একটি পরিবারকেই নয়, বরং পুরো জাতিকেই নাড়া দিয়েছে। রামপুরা থানার প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মুশফিক নিজেই ফরাশ উদ্দিন ভবনের ১০ম তলার ছাদে উঠেছিলেন এবং সেখানে অন্য কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। তবে মৃত্যুর আগে ও পরে সহপাঠীদের বুলিং, কটূক্তি ও অপমানের অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসায় ঘটনাটিকে কেবল ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে দেখার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে বলে মনে করছে সোচ্চার।

তাদের মতে, বুলিং ও মানসিক নিপীড়ন যেকোনো অবস্থায়ই অগ্রহণযোগ্য এবং তা শিক্ষার পরিবেশ, মানবিক মর্যাদা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত সোচ্চারের মানসিক স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত নিড অ্যাসেসমেন্ট জরিপে দেখা গেছে, র‍্যাগিং, বুলিং ও কটূক্তি প্রতিরোধ এখন শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে জরুরি বিষয়। ক্যাম্পাসে মানসিক নিরাপত্তার অভাব, সম্মানজনক পরিবেশের সংকট ও কার্যকর রিপোর্টিং ব্যবস্থার ঘাটতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে নানা জটিলতা তৈরি করছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

মুশফিকের মর্মান্তিক মৃত্যু সারা দেশের ক্যাম্পাসে বুলিং প্রতিরোধে কার্যকর নীতি ও কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তাকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে সোচ্চার পাঁচ দফা দাবি ও আহ্বান জানিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে–

১. মুশফিকের মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ সত্য উদঘাটনে অবিলম্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

২. তদন্ত প্রক্রিয়ায় সহপাঠীদের অভিযোগ, ক্যাম্পাস পরিবেশ, সম্ভাব্য মানসিক চাপ এবং ঘটনাক্রমের প্রেক্ষাপটকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে।

৩. তদন্তে বুলিং, কটূক্তি বা অপমানের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের মানসিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে স্পষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান জানাতে হবে।

৫. এবং দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং, র‍্যাগিং ও মানসিক হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, স্পষ্ট রিপোর্টিং ব্যবস্থা, কাউন্সেলিং সুবিধা এবং নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করতে হবে।

গত ২০ নভেম্বর রাজধানীর আফতাব নগর এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির দুই ভবনের মাঝের ফাঁকা স্থান থেকে মুশফিকুজ্জামান নামে এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ি উপজেলার পাচগাঁও গ্রামে বলে জানা গেছে।

আরএইচটি/এসএসএইচ