স্কুল ফিডিং প্রকল্পে নতুন বরাদ্দ হচ্ছে না। নতুন বরাদ্দ ছাড়াই আগামী এক বছর এ প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যেতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে ‘মিড ডে মিল’ প্রকল্পের খিচুড়ির পরিবর্তে বিস্কুট বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে সরকার। এক বছর পর প্রকল্পটি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করা হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি একনেকে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের খিচুড়ি প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার পর ‘নো কস্ট’ অর্থাৎ ব্যয় না বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বিস্কুট খাওয়ানোর কর্মসূচি আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ প্রস্তাবে রাজি নন। তিনি চাচ্ছেন সরাসরি বিস্কুট না দিয়ে বিস্কুটের সমপরিমাণ টাকা শিক্ষার্থীদের মায়ের মোবাইলে উপবৃত্তির মতো পৌঁছে দিতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিস্কুটের পরিবর্তে টাকা দিলে নানান জটিলতা বাড়বে। তাছাড়া এখন যে বিস্কুট দেওয়া হয় তা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFO) টেকনিক্যাল সহায়তায় তৈরি করা হয়, যা বেশ পুষ্টিকর। তাই টাকা দিলেই একজন শিক্ষার্থী এসব বিস্কুট বাজার থেকে কিনতে পারবে না।

শিক্ষার্থীদের বিস্কুট কর্মসূচি বাড়ানো হবে নাকি টাকা দেওয়া হবে- মন্ত্রণালয়ের এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে সচিবকে বিস্কুট কর্মসূচি একবছর বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। ২৬ জুন সচিবকে লিখিত এ নির্দেশনা দেন তিনি।

মন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পর কী করবেন জানতে চাইলে সচিবের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করবেন না বলে জানান।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানায়, মিড ডে মিল প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে চলতি মাসের ৩০ জুন। এ অবস্থায় এ খাতে নতুন বাজেট দিচ্ছে না সরকার। বলা হয়েছে, খরচ কমাতে এ প্রকল্পের বিকল্প চিন্তা করতে। কিন্তু বিকল্প কি ব্যবস্থা রাখা হবে সেটির জন্য বছরখানেক পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। তাই ১ জুলাই থেকে আগের বাজেটের উদ্বৃত্ত অংশ থেকে এ প্রকল্পের কাজ চালিয়ে নেওয়ার সচিব বরাবর আবেদন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর মহাপরিচালক আলমগীর মুহাম্মদ মনছুরুল আলম। গত ১০ জুন সচিবের কাছে তিনি এসব বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মনছুরুল আলম বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করে চলমান দরিদ্র পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি (৩য় সংশোধিত) প্রকল্পের মেয়াদ একবছর বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এক্ষেত্রে চলমান প্রকল্পে বিদ্যালয়ে বিস্কুট বিতরণের জন্য নিয়োজিত এনজিওগুলোর সাথে চুক্তির মেয়াদ চলতি জুন মাসেই শেষ হবে।

তিনি বলেন, ব্যয় সাশ্রয় করার লক্ষ্যে আগামী জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পটি বর্ধিত করা হলে এনজিওদের সাথে চুক্তি করার প্রয়োজন হচ্ছে না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নিজস্ব জনবল দ্বারা বিস্কুট বিতরণের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের স্কুল মিল কার্যক্রম চলমান রাখা পর্যায়ক্রমে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্প্রসারণের জন্য ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একটি বিনিয়োগ প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছিল। এ প্রকল্প প্রস্তাব গত ১ জুন প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়নি। সভায় চলমান স্কুল মিল প্রকল্পটি পর্যালোচনা করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

যেহেতু চলমান স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি ৩০ জুন শেষ হবে তাই, জুলাই থেকে বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা সম্ভব হবে না। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়কালীন সময়ে পুষ্টির অভাব পূরণ এবং ক্ষুধা নিবারণে স্কুল মিল প্রদান করা না হলে শিশুদের স্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, চলমান প্রকল্পসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন স্কুল ফিডিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করে একটি কার্যকর মডেল নির্ধারণ এবং ব্যয় প্রাক্কলনের যথার্থতা যাচাই করার জন্য কমপক্ষে ১ বছর সময় প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে চলতি মাস পর্যন্ত চলমান প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হবে ৪ হাজার ৫১৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি খাতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। প্রকল্প সাহায্যের সমুদয় অর্থ ব্যয় হবে না। অর্থাৎ জিওবি খাতে ৪৭৩ কোটি ৯ লাখ টাকা অব্যয়িত থাকবে। এ অবস্থায়, অব্যয়িত অর্থ দিয়ে স্কুল ফিডিং প্রকল্পের চলমান বিদ্যালয়সমূহে কেবল উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ বিস্কুট প্রদান করা হলে জুলাই থেকে ১২ মাস এ কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে।

এনএম/এইচকে