কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত আসনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। এ বিধি ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে লাল তারকায় চিহ্নিত করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। 

সম্প্রতি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দের সভাপতিত্বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শিগগিরই এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে অবহিত করা হবে বলে সোমবার (১৮ জুলাই) ইউজিসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

এতে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন ছাড়া প্রোগ্রাম ও কোর্স পরিচালনা এবং অনুমোদিত আসন সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করলে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে লাল তারকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

লাল তারকা চিহ্নিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি না হতে পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। অনুমোদিত প্রোগ্রাম ও এর আসন সংখ্যা নিশ্চিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে উচ্চ শিক্ষার দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটি। 

কমিশন অনুমোদন দেয়নি- এমন ভবন ও ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, ছয় মাসের অধিককাল ধরে আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার না থাকা, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মালিকানা সংক্রান্ত দ্বন্দ্বসহ অন্যান্য সমস্যার কারণেও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে লাল তারকা প্রদান করা হবে।

এ বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, অনুমোদিত আসনের বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করার কোনো সুযোগ নেই। কোন বিশ্ববিদ্যালয় এটি করে থাকলে তা আইনিভাবে বৈধ হবে না। ভর্তি হওয়া অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের সনদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেট বিক্রির মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে।

এদিকে, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে অনুমোদিত আসন সংখ্যার বিপরীতে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইউজিসির একজন সদস্যকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার ও বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যানকে গতকাল কমিশনে তলব করা হলে তারা কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ : অনুমোদিত আসন ৪০ ভর্তি হয়েছে ৯০০’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে সেমিস্টার প্রতি ভর্তির আসন সংখ্যা ৪০। যদিও গত শিক্ষাবর্ষে শুধু এক সেমিস্টারেই বিভাগটিতে নয় শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুধু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, অধিকাংশ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে অনুমোদিত আসনের কয়েকগুণ বেশি। এর মধ্যে গত শিক্ষাবর্ষের স্প্রিংয়ে বিএসসি ইন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (ইইই) ৩৫টি আসনের বিপরীতে ৫৮৪ জন, বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩০টি আসনের বিপরীতে ২৩৯, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৩০টি আসনের বিপরীতে ১৪৩ ও ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (বিবিএ) ৫০টি আসনের বিপরীতে ৯৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি।

এ বিষয়ে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইউজিসি থেকে পূর্বানুমোদন নিতে হয়। শিক্ষক সংখ্যা ও ল্যাব সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সর্বোচ্চ আসন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয় কমিশন। ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ে ইউজিসি গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো প্রোগ্রামে এক সেমিস্টারে সেশনে ৯০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি ও যথাযথভাবে শিক্ষাদান করার সক্ষমতা বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েরই নেই।  

এনএম/আরএইচ