করোনার কারণে বাতিল হওয়া ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি ও প্রকাশের জন্য শিক্ষাবোর্ডগুলোকে ক্ষমতা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে ফল প্রকাশ করতে শিক্ষাবোর্ডের কোনো বাধা রইল না। 

তবে ফল প্রকাশের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক সম্মতির প্রয়োজন হয়। সেই সম্মতি চেয়ে তার কাছে আবেদন করা হবে। সম্মতি পাওয়ার পরই ফল প্রকাশের তারিখ ঘোষণা করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।  

মঙ্গলবার (২৬ জনুয়ারি) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত ক্ষমতা দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে।   

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চলমান বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ ভাইরাসজনিত কারণে ২০২০ সালের এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (বিএম), এইচএসসি (ভোকেশনাল),  ডিপ্লোমা-ইন কমার্স-দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড (সংশোধন) আইন, ২০২১ এর ৮(২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ সংক্রান্ত গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২০২০ সালের এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (বিএম), এইচএসসি (ভোকেশনাল)/ডিপ্লোমা-ইন কমার্স-দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফল প্রস্তুত, প্রকাশ ও সনদ বিতরণের জন্য শিক্ষা বোর্ডকে ক্ষমতা দেওয়া হলো।

এদিকে ফল প্রকাশের জন্য সব কারিগরি দিকগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছে শিক্ষাবোর্ডের এ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি। সিস্টেম অ্যানালিস্ট, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, কলেজ ও সনদ শাখার কর্মকর্তারা বার বার ফলের কারিগরি দিকগুলো যাচাই-বাছাই করছেন। 

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা মঙ্গলবার রাতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ১১টা বাজে, আমি এখনও বোর্ডে কাজ করছি। এবার যেহেতু পরীক্ষার খাতাবিহীন ফল প্রকাশ করা হবে, তাই সবাই একটু বেশি সতর্কতার মধ্যে আছি।  

তিনি জানান, পরীক্ষার ফল তৈরির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছি। সে সফটওয়ারে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর এসএসসি এবং জেএসসি ফল ইনপুট দেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী বিভাগ পরিবর্তন করেছে বা মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছে তাদের জন্য এটি আলাদা বলা হয়েছে, সেই নীতিমালার আলোকে তাদের তথ্যগুলো ইনপুট দেওয়া হয়েছে।

আমাদের সফটওয়্যার এখন রেডি। ফল প্রকাশের আগের দিন  ‘ওকে’বাটনে ক্লিক করার পর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ফল তৈরি হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর নেহাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফল প্রকাশের জন্য মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা দেওয়ার পর আইনগত কোনো বাধা নেই। যেকোনো মুহূর্তে ফল প্রকাশ করতে পারি।

তবে ফল প্রকাশের আগে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি নেওয়াসহ আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতা যেগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুরু করেছে। এগুলো শেষ হলে ফল প্রকাশ করতে পারব। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি না পাওয়ার পর্যন্ত দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না।

এদিকে সোমবার (২৫ জানুয়ারি) পরীক্ষা ছাড়াই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে সংসদে পাস হওয়া তিনটি সংশোধিত আইনের গেজেট জারি করা হয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তিনটি বিলে সম্মতি দেন। বিল তিনটিতে রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর সেগুলো আইনে পরিণত হয়।

‘ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) আইন-২০২১’, ‘বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড (সংশোধন) আইন-২০২১’ও ‘বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (সংশোধন) আইন-২০২১’- এর গেজেট জারি করা হয়েছে। এর আগে শনিবার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে বিল তিনটি পাস হয়। 
 
২০২০ সালে ৯টি সাধারণ, কারিগর ও মাদরাসাসহ মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৯ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ১ এপ্রিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

গত বছরের অক্টোবর মাসে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার না নিয়ে জেএসসি এবং এসএসসি ফলের গড়ের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল দেওয়া হবে। জেএসসিতে ২৫ শততাংশ এবং এসএসসিতে ৭৫ শতাংশ ধরে এ ফল তৈরি করা হবে।


এনএম/জেডএস